গান নং ৫১~৬০
গান নং -৫১
বন্দনা
নমঃ নমঃ হরিচাঁদ বাঞ্ছাকল্পতরু।
নমঃ নমঃ গুরুচাঁদ মতুয়ার গুরু।।
সৃষ্টি স্থিতি সংহার আপন অংগে ধরি।
লীলা করে ঈশ্বর ক্ষীরোদশায়ী হরি।।
গার্হস্থ্য প্রশস্ত ধর্ম মানুষের তরে।
আচরিয়া নিজে জীবকে শেখায় পরে।।
জাগতিক মুক্তিমন্ত্র শিক্ষা বটে হয়।
দলিতেরে দিল গুরুচাঁদ দয়াময়।।
আধ্যাত্মিক মুক্তি হরিনাম মহামন্ত্রে।
পুরিয়া সুতানে দিল তা হৃদয়তন্ত্রে।।
ভাবাবিষ্ট উপদেষ্টা শ্রীতারক গুরু।
বৃন্দাবন ভজে তাঁরে বাঞ্ছাকল্পতরু।।
গান নং-৫২
তমাল তলে বসে আছি, শ্যাম যদি আসে
মোহন বাঁশির সুর শুনেছি, রাধা নাম ভাসে।
যমুনা নীরব আজি স্রোত নাহি বয়
শ্যাম ছায়া ধরিব বলে
শ্যাম আসে না, নুপুর ধ্বনি আসে।
ও রাধে, শ্যাম কেন করে ছল
বল, বল, রাধে বল।
শ্যাম কেন গো করে ছল।
শ্যামের পথ চেয়ে, আঁধার আসে ছেয়ে
আমি কোন পথে বল যাব ধেয়ে
শ্যাম চরণের আশে।
গান নং- ৫৩
রাখাল বিশ্বনাথের জীবন দান
হরিঃ
তোরা সবে এলি গোঠে, বিশে গেল কোথা
তোরা কি দিতে পারিস, বিশের বারতা।
নাটুঃ
কেমনে বলি সে নিদারুণ কথা
সে কথা জানাতে লাগে, মরমেতে ব্যাথা।
হরিঃ
বল! বল! বিশের কি হয়েছে বল?
চোখে কেন জল হেরি, কি হয়েছে বল?
নাটুঃ
ওরে হরি, তোর বিশে আছে কিনা আছে
বিসূচিকায় বিশে হত, শুইয়ে রয়েছে।
দেখে এলাম, মরণ যাত্রা বিশাইর আজ
সাজাইছে তারে সবে, শেষ বিদায়ের সাজ।
হরিঃ
কি বলিস! ওকি কথা, নিদানের কর্তা আমি
বিশেরে কি করিবে, সামান্য এ বমি।
চল! চল! তোরা সবে, বিশেরে দেখে আসি
জনমের মত আজ, বিশেরে নিয়ে আসি।
ব্রজ ও নাটুঃ
চল! চল! চল! দ্রুতগতি চল,
কত কষ্ট পায় বিশে, ত্বরা করি চল।
বিশের মাঃ
ওরে বিশে, কথা বল, কথা বল, র’লি কেন শুয়ে
চিরদুঃখিনী মাকে কেন যাস তেয়াগিয়ে।
হরিঃ
বিশে! ওরে বিশে, র’লি তুই কোথায়
তোর অন্তর জ্বলে দেখে, মোর জ্বলে যায়।
উঠে আয়, উঠে আয়, নিতে এলাম তোরে
আমি না ছাড়িলে তোরে, কে নিতে পারে।
বিশের মাঃ
ওরে হরি, তোর বিশে চলে যায় আজ
কেমনে সাজিবি তোরা আর গোষ্ঠ সাজ।
হরিঃ
কেদ না মা, বিশে বুঝি ঘুম পড়েছে
এখনি জাগিবে মাগো, মনে বলেছে।
ওরে বিশে, ওঠ! ওঠ! বেলা বয়ে যায়
গোচারণে যাব সবে, সময় চলে যায়।
বিশ্বনাথঃ
মা! মাগো, তুমি কাঁদিতেছ কেন?
এতলোক কেন মাগো, কি হয়েছে হেন?
ও হরি, কি হয়েছে, বল, মোরে বল
বেলা হল, সবে মিলে গোচারণে চল।
হরিঃ
মাগো, বিশেরে গোঠে সঙ্গে লয়ে যাই
দিয়ে দে মাগো, বিশেরে লয়ে যাই।
বিশের মাঃ
ওরে হরি, তোর বিশে তুই নিয়ে যা
তোর বিশে তোরে দিলাম আজ নিয়ে যা।
বিশেরে লয়ে হরি গোঠে চলে গেল
ভব ভয় দূরে যাবে, হরি হরি বল।
গান নং ৫৪
যদি চোর ধরতে চাও,
সন্তর্পণে চুপি চুপি সজাগ হয়ে রও।
এ চোরা বিষম ত্যাড়া, দরজাতে সে নাড়ে কড়া,
আপন বলে দেয় পরিচয়, মাল নিয়ে সে হয় উধাও।
চোরের সংগী পাঁচ জন, তারা ভুলায় মালিকের মন,
আরো সহকারী দশ জন আছে, দেখতে পাবে যেদিকে তাকাও।
চোরকে যদি ভাব নগণ্য, কাজটি হবে অতি জঘন্য,
দেখেশুনে করবে চুরি, যতবার যোগান দাও।
যদি চোর ধরতে পার, নিজের অধীন বশ কর,
তবে চোরা পাহারা দিবে, মাল যাবে আর কোথাও।
দেখে চোরের আনাগোনা, সেই ভাবে কর বিবেচনা,
চেনা জনের পরামর্শ নিয়ে, চোরের কাজে লাগাম দাও।
তারক চাঁদের মধুর রীতি, চোরের সংগে করে পিরীতি,
বৃন্দাবনের সব গিয়েছে, শূন্য থলি পাহারা দাও।
গান নং ৫৫
কেন মনে শঙ্কা হল।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আছে সাথে দেখ তোমার সঙ্গী হল।
সুযুক্তি বিধানে প্রভু অবতীর্ণ হল,
বদ্ধ জীবের চিন্তা গেল, প্রেমানন্দে হরি বল।
শ্রীহরিচাঁদ দিল হরিনাম, খণ্ডাইল পাপ-পূণ্যের বিধান,
দুঃখী তাপী উঁচু নীচু, প্রেম পেল যে সমান সমান।
প্রেমের এক সিন্ধু এনে, বিন্দু দিল জনে জনে,
চাওয়া পাওয়ার ধার ধারে না, যারে পেল তারে দিল।
গুরুচাঁদ দিল শিক্ষা, সবাইকে দিল কর্মে দীক্ষা,
শিক্ষা বিমুখ যে জন রবে, মতুয়ায় না করবে দেখা।
দলে দলে সবদল মিলে, কুসংস্কার রুখে দিলে,
তুমি আমি রই পিছনে, ঐ দলের সংগে মিলে চল।
দলিত জাতির মহামুক্তি, ধর্মে কর্মে করে উন্নতি,
তবুও মোরা ভিন্ন মতি, করি পদে পদে নিজের ক্ষতি।
বৃন্দাবনের এই নিবেদন, কর সবে অতীত বিশ্লেষণ,
জাতির রক্ষা করার জন্য, ভিন্ন মতের দ্বন্দ্ব ভোল।
গান নং ৫৬
নীচ হয়ে করিবে সে নীচের উদ্ধার,
তাইত দেখ, নীচু স্তরে এল আমার হরি অবতার।
নীচুর কাছে মাথা নীচু, এ সাম্য বিধান উঁচু,
ভেদাভেদ আর উঁচু নীচু, এবার সব হয়েছে একাকার।
উঁচু নীচু করতে সমান, সূক্ষ্ম ধর্ম সূক্ষ্ম জ্ঞান,
সবার তরে এক হরিনাম, সমর্পিল হরিচাঁদ আমার।
ব্রাহ্মণ্যবাদের জটিল জালে, মানুষ সূক্ষ্ম জ্ঞান গেছে ভুলে,
এবার কুসংস্কার সব বিনাশ করে, দূর করিল জাত বিচার।
সবার প্রতি সমান মান, আত্মবিচার অনুসন্ধান,
বিবেক বুদ্ধির এই অবদান, সবার তরে সমান ব্যবহার।
নিজে না পালিলে ধর্ম, অন্যে কিসে বুঝবে মর্ম,
এই রীতি সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম, মতুয়া দর্শন হল প্রচার।
যদি মুক্তি পেতে চাও, শ্রীগুরুর শরণ লও,
স্মরণ করে গুরুর চরণ, কার্য কর অনিবার।
তারক, অশ্বিনী, গোলকচাঁদ, পাতিয়াছে প্রেমের ফাঁদ,
বৃন্দাবনের কি অপরাধ, করতে নারে চরণ সার।
গান নং ৫৭
ধর্ম ধর্ম করছ সবাই, যদি ধর্মের মর্ম বুঝতে চাও,
ধর্ম ত্যাগ করে আগে, সবাই মিলে মানুষ হও।
মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব, তত্ত্ব জেনে হও মত্ত,
মানুষ যদি অমানুষ হয়, ধর্ম করে পালাও পালাও।
সব সৃষ্টিরই ধর্ম আছে, অনুভবে বিরাজিছে,
যেমন আগুনের ধর্ম পুড়িয়ে দেওয়া, তাঁর কাছে গিয়ে বুঝে নাও।
সত্য বাক্য সরলতা, সবার মধ্যে মানবতা,
মনুষ্যত্বের এই বারতা, আগে নিজের মধ্যে জাগাও।
দোষ ত্রুটি ভাই সবার আছে, দোষটি নিয়ে সবাই নাচে,
ভাল দেখ থাকে পিছে, সন্ধান করে সামনে লও।
নিজের চরিত্র শুদ্ধ কর, নিজ মুখের লাগাম ধর,
কায় মন বাক্যে সত্য বল, বহির্মুখে খিড়কি লাগাও।
যতই বলি ভাল কথা, মনে জাগে বড় ব্যথা,
জাগাতে সেই পবিত্রতা, বৃন্দাবন তুমি নীরব হও।
গান নং ৫৮
শ্রীহরিচাদেঁর বাণী শুনতে পাই,
পরোপকার শ্রেষ্ঠ কর্ম, এর উপরে ধর্ম নাই।
ভিক্ষা দিয়ে পূণ্য অর্জন, উপকার নয় লোভের করণ,
জেনে বুঝে করলে এমন, রক্ষা পাওয়ার উপায় নাই।
সক্ষম জনে করলে ভিক্ষা, রসাতলে যায় আত্মশিক্ষা,
এমন জনে দিলে ভিক্ষা, পাপ থেকে আর ক্ষমা নাই।
ধর্ম কাজে ভিক্ষা গ্রহণ, নিকৃষ্ট নাই কর্ম এমন,
শিক্ষা জন্য করলে ভিক্ষা, উপকার হয় দেখতে পাই।
সনাতনের শিক্ষা রীতি, ভিক্ষাতে হয় আত্মোবনতি,
মানুষে হয় অমানুষ ভিতি, মনুষ্যত্বের বালাই নাই।
কারো উপকার করতে হলে, ভিক্ষার কারণ দল সমূলে,
কর্ম নিষ্ঠ করা গেলে, জাতির উন্নতি হবে ভাই।
সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম জ্ঞান, দিয়ে গেলেন হরি গুরুচান,
সত্য মিথ্যার সূক্ষ্ম ব্যবধান, বুঝে কর্ম করা চাই।
নিজ জীবনে করে অনুশীলন, অপরে জানাও শিক্ষার কারণ,
বৃন্দাবন হীন এমন, ভালো মন্দের বিচার নাই।
গান নং ৫৯
সুন্দর হরি (শুনেছি) চলে ভক্ত সঙ্গ ধরি
এই কি তার প্রেমের নমুনা।
(ভক্ত) একা চলিছে গহীন আঁধার পথে
শ্বাপদ সংকুল বন পথ বাঁধা পদে পদে
তার বারিধারা ঝরিছে নয়ন পাতে
তার বিরহের দিন ফুরায় না।
প্রভু তুমি তার কতখানি আপনজন
তোমার নামে জল ঝরে তার ভরে দুনয়ন
সে তোমায় ছাড়া খায় না কখন
তবু তারে কাছে ডাক না।
ঘাটে পথে যেতে যেতে ভাল যা কিছু পায় তোমার জন্য রাখে
যেদিন পায়না কিছু তোমায় দেওয়ার অনাহারী থাকে
ফুল তুলসী নয়ন জলে নিজের মনে তোমায় ডাকে
সে তোমার প্রাণের আধা তবু তারে দেখা দেওনা।
গান নং ৬০
কবে শ্রীহরির রাঙা চরণ পাবো
কবে হরি ভক্তের সঙ্গ পেয়ে আমার ত্রিতাপ দগ্ধ প্রাণ জুড়াব।
যে পথ দিয়ে আমার হরিভক্ত যায় সেই পথের ধুলি দে
চোখের জলে মিশায়ে তিলক করে আমার গায়ে মেখে দে
কবে এমন ভাগ্য হবে আমি হরি ভক্তের পরশ পাব।
কবে হবে আমার পাগলের স্বভাব
থাকবে না আর কোন অভাব
আমার থাকবে না কোন রিপুর প্রভাব
সদানন্দে মনে প্রাণে মহাভাব পাব।