গান নং ৬১~৭০
গান নং ৬১
হরিবোল হরিবোল হরিবোল হরিবোল বল রসনা
হরিনামে যে জন আছে---- সে কি দূরের কেউ
তারে আপন ভাব না।
আপন জন তোর আছে কত
মাতা-পিতা আর দ্বারা-সূত
হরি নয় কি তাদের মত
তারে মনে রাখ না।
সময় যখন ভালো থাকে
তারে ভুলে থাক নানান ফাঁকে
আসবে কেনসে তোমার ডাকে
যখন সময় ভালো না।
ফেলে দে তোর তর্ক-আড়ি
তারে আসন দে তোর আপন বাড়ি
তুই করগে তারে দ্বারের দ্বারী
যাবে সকল ভাবনা।
ভক্তপ্রবর যখন ফেরে ধর তার চরণ দুটি
তুমি দুহাত ভরে ভক্তি প্রসাদ নেওগো লুটি
হরিই ভক্ত ভক্তই হরি বাঁধ তাহে এক গুঁটি
এত মন্ত্রের জোর নয় হরি নামের সাধনা।
গান নং ৬২
কে যাবিরে ওড়াকান্দি, হরিচাঁদে ডাকছে ওই
দেখবি হরির খেলা মতো’র মেলা
চল না থাকতে সময় রওনা হই।
ভাবিস কি তুই নিত্য বসে, কাল বিলম্ব করিস কি সে,
(তুই) মেতে উঠবি প্রেমের রসে, আয় না হরিচাঁদের স্মরণ লই।
হরিবোল বোল বলিয়ে, যাওরে আজ নেচে গেয়ে,
ধুলি মেখে সারা গাঁয়ে, প্রেম বারুণীতে ডুবে রই।
ঢাকের বাদ্য ভীষণ রবে, অনাহতের ঘুম ভাঙাবে,
অ-রূপের রূপের ভাবে, স্ব-রূপ হরি দেখবি সই।
করুণাসাগরের পূণ্য জলে, ডুব দিবি (তুই) হরিবোলে,
অ-ভাব আর স্ব-ভাব ছলে, যে ভাবে যাও প্রেম মেলে সই।
ভাব না হলে মনের ঘরে, প্রেম মেলে কি কোন প্রকারে,
ধুলো তুলে ধুলি মাখ, ধুলোই রয় সারা গায়
নাম নামীরে অভেদ ভাবা, নামে তারে দেখতে পা’বা,
সহজ কি আর অত সোজা, ভাবতে ভাবতে সময় যায়।
হরিভক্তের পরশ বিনা, হরিনামে প্রেম আসেনা,
বৃন্দাবনের এই ভাবনা, হরিনামের নিশান কই?
গান নং ৬৩
তুমি ধরা যদি নাই দিতে চাও
স্বপন মাঝে এসো
আমি তাতেই খুশি হব।
তোমার পরশ যদি নাই বা পেলাম
দরশ তবু পাব
আমি তাতেই খুশি হব।
তুমি দেখা যদি নাই দিতে চাও
মানস পটে এসো
আমি তাতেই খুশি হব।
তোমার দরশ যদি নাই বা পেলাম
নয়ন মুদে পাব
আমি তাতেই খুশি হব।
তোমায় একবার যদি পেলাম আমি
আর না ছাড়িব
তোমার চরণতলে বসে রব।
চরণতলে বসে তোমার চরণ ধুলি
মাথায় তুলে লব
আমি তাতেই খুশি হব।
তোমার দরশ-পরশ নাও যদি পাই
তুমি অনুভবে এসো
আমি তাতেই খুশি হব।
তোমার অসীমে আমি বিলীন হব
আমি তোমার মাঝে রব
আমি তাতেই খুশি হব।
গান নং ৬৪
ওহে কর্ণধার, বহ জীবন ভার
তোমার সরল পথে আমার জীবন রথ
চলিতে পারে না আর।
মোহমুগ্ধ এই ভুবনে (আমি) ঘুরব কত জনমে
পরশমণির পরশ বিনে হবে কি তা স্বর্ণাধার?
সারা দিন ঘুরে ঘুরে বেড়াই কত না কাজ করে
জীবন প্রান্তে শূন্য ভাণ্ডার দিনান্তে সকলি অজাচার।
গান নং ৬৫
তুমি এসো, তুমি এসো
উষ্ণ মরুর বুকে শীতল ধারায় এসো
ত্রিতাপ জ্বালায় তাপিত প্রাণ সিক্ত কর
করুণা ধারায় এসো।
তোমার এ সৃষ্ট রাজ্যে আমি
কুন্তল হতে হীন জানি
ওহে অখিলপতি,
বরিষ শান্তি বারি মম হৃদয় প্রাঙ্গণে
অরূপ আড়াল করি স্বরূপ ধরি এসো।
বিষয় বাসনা পুরাতে
মত্ত আছি সংসারেতে
প্রাণের কামনা দিয়ে বিসর্জন
তোমায় ভুলে আছি আমি
হে নিরঞ্জন,
তুমি মম অন্ধ হৃদয়ে ক্ষণিকের তরে
আলোক হয়ে এসো।
তোমার প্রেম সিন্ধু হতে এক বিন্দু বারি দিয়ে
মোর হৃদয়ে শীতল মলয় দাও বহিয়ে
ওহে প্রভু,
করি এই নিবেদন
মনেতে মোর কর প্রেম সিঞ্চন
প্রেমময় তুমি হে প্রেমময় তুমি
রিক্ত হৃদয়ে পূর্ণ আনন্দ হয়ে এসো।
গান নং ৬৬
আমি বসে আছি-
কতদিনে আসবে সেই শুভদিন
কবে নীরব হবে সকল মুখরতা
কবে শান্ত হবে বিচলিত হিয়া
কবে ঘুচিবে সকল চঞ্চলতা।
অধীর হয়ে আছি কখন আসবে তোমার বাণী
শুনব, প্রাণ জুড়াবে, দূর হবে হৃদয়ের সব ভার
সকল চাওয়া পূর্ণ হবে, রবে না দুঃখ খেদ
হবে আনন্দ অপার
পরশি তোমার বাণী ঘুচিবে
মনের সকল মলিনতা।
কালের খেয়ায় ভেসে যায়
মানুষের সকল চাওয়া পাওয়া
তবুও পূর্ণ অপূর্ণ অনন্ত কামনা
নিত্য করে আসা যাওয়া
হেরে যায় তবু ভিক্ষা মাগে কালের কাছে
আর কিছুদিন থাকে যেন এই ধরা মাঝে
দূর হবে চাওয়া পাওয়া দূর হবে আশা
পূর্ণ হবে সকল কামনা অনুভবি তোমারে
পূর্ণ সত্য দরশন হবে
দূরে যাবে সকল অলীকতা।
গান নং ৬৭
চাহিব না চাহিব না
আর কিছু চাহিব না
যখন আমার যা প্রয়োজন
না চাহিতে কর তার আয়োজন
তবুও অস্থির মন চায় অনিবার
মর্ম বোঝে না।
মোর প্রয়োজন আমার চেয়ে তুমি ভাল জান
জানিতে তাই বারে বারে মন উচাটন
জানিতে তোমার কর্ম তোমার মর্ম
বোঝার নিয়ত আমায় দিলেনা।
পূর্ণ পাত্র শূন্য করে পূর্ণ কর আবার
কাছে ডেকে লও কাহারো
যখন সময় ফিরে যাবার
রিক্ত ঢালি পূর্ণ করি ভক্তি ফুলে
দু-হাত ভরে ওচরণে দেব তুলে
তোমায় ডেকে আনব এই ভূতলে
মাধুকর আর হব না।
গান নং ৬৮
ওগো পথিক, আবার ভুল করো না
আবার পথ ভুল করো না
বিপথে আর না যেয়ে স্বীয় পথে চল ধেয়ে
সামনেই যাবে পেয়ে তোমার ঠিকানা
তোমার সীমানা।
বিমনা আর না হইয়ো সিদ্ধান্তে অটল রইয়ো
পথের কাঁটা দলে যেয়ো অলস বসে আর থেক না।
কল্পতরুর ছায়া তলে দাঁড়াইয়ো না দু-হাত তুলে
নতুন কিছু পেতে হলে পিছন ফিরে আর দেখনা।
আন কথা বলবে অন্য জনে শুন না তা কোন ক্ষণে
চলে যাও আপন মনে যা বলে তা বলুক না।
গান নং ৬৯
চল সবাই ভবপারে যাই
(আমার) প্রাণের ঠাকুর হরিচাঁদ দিয়েছে বিধান
আর পারে যেতে কারো কোন বাঁধা নাই।
হরিবোলে সবাই কাঁদি কাঁদি (আমরা) চল যাই ওড়াকান্দি
এসো আমরা হরিবোলে হৃদ পিঞ্জরে হরিকে বাঁধি
এবার চল হরিনামের প্রেম সাগরে এই জীবন তরী ভাসাই।
তোমার থাকতে সুসময়
এই সংসারের মায়ার বাঁধন নিজেই কেটে দাও
এই সংসারে বিষয়ের গরল ফেলে
হরিনামের অমৃত সুধা একবার তুমি খাও
সেই প্রেম পাবি সবাই যে প্রেমে ডুবেছে ওই কৃষ্ণ প্রেমে রাই।
এই হরিনাম নিয়ে বসি বিজনে
হরিচাঁদ রূপ দেখ একবার তোমার হৃদ নয়নে
হরিচাঁদ রূপ করে সাথি হরিবোলে চল পারের পানে যাই।
সংসারে একসঙ্গে এক পুরুষ আর এক নারী
আমরা সবাই হব সেই সনাতন ব্রহ্মচারী
এই বিধান দিল আমার দয়াল হরিচাঁদ
মুছে ফেলে বৈষ্ণবের কুটিনাটি নামকে করেছে খাটি
সবার তরে এক হরিনাম দিয়ে কেটেছে বৈষ্ণবের নাম অপরাধ
মুখে একবার হরিবোলে দাও ভাসায়ে এই দেহতরি
কাণ্ডারি হবেন আমার হরিচাঁদ গোঁসাই।
গান নং ৭০
মুক্তির আলো আসিতেছে ঐ কৃষ্ণ মেঘের গগন ভেদিয়া
অশান্ত পুষ্পদল গুলি তোমার চরণে পড়িছে ঢলিয়া।
সারাদিন রাত ভরি সে বেড়ায় নানান কাজে
তার সকল কাজে সকল সময় সে তোমায় খোঁজে
কখনো হৃদ কাননে ঝড় বয়ে যায় ঘূর্ণি পবন আসিয়া।
সে দিনের শেষে ফিরে আসে আপন আলয়ে
তোমার সুরের তানটি ধরে তোমাতে যায় হারিয়ে
যেখান হতে ভেসে আসে তোমার বীণার সুর
সেথায় যেতে চায় সে যে হৃদ বাহনের পাখা মেলিয়া।