মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

পৃষ্ঠাঃ ৮১-১০০

কেন্দে বলে গুরুচাঁদে জগৎ গোঁসাই
কে বলে গিয়াছে হরি, হরি যায় নাই
।।
পরাণ হরণ হরি এই খানে দেখি

তোমা মধ্যে হরিচাঁদ দেয় ঝিকিমিকি
।।
তোমার মধ্যেতে হরি রহিয়াছে মিশি

হরি গুরুচাঁদ, মিলি হল পূর্ণ শশী
।।
পিতা পুত্র অভিন্নাত্মা দোহে এক প্রাণ

তারিলে জগৎ জীবে সাধিলে কল্যাণ”
।।
গলে বস্ত্র জোড় হস্ত করি সে তারক

স্তব করে মনোসাধে হইয়া পুলক
।।

 

প্রণমি চরণে জগৎ শরণে 
অনাদি কারণে আমি

জগৎ পালক ব্রহ্মাণ্ড নায়ক 
কলুষ হারক স্বামী
।। 
গুণময় বিভু অখিলের প্রভু 
গুণে নাই কভু সীমা

আমি অতি মূঢ় না জানি নিগূঢ় 
চরণে চাহিনু ক্ষমা
।।
কিবা কব জানি সেই কথা শুনি
ওহে গুণমনি হরি

করিবে করুণা এ মূঢ় বাসনা 
কেমনে ধারনা করি
।।
বানী বাগেশ্বরী বর্ণনাতে হারি 
পদ সার করি দাসী

সূর্য চন্দ্র পুজে প্রদীপের সাজে 
আপন গরজে আসি
।।
চামর দোলায় পবন সদায় 
সাগর ধোয়ায় পদ

যত নদী নদ করি কলনাদ
ছুটে প্রেম গদ গদ
।।
শাখে ডাকে পাখি তোমারে নিরখি 
কুসুমের আঁখি ফুটে

শিশিরের কণা হয়ে অশ্রু কণা 
তোমার চরণে লুটে
।।
অতল সলিলে প্রলয়ের জলে 
ধরাকে রাখিলে ঢাকা

ধরাকে জাগাতে মৎস রূপেতে 
মেলিলে জলেতে পাখা
।।
দশ অবতার এস বারবার 
হরে ধরাভার সুখে

দুষ্টেরে নাশিতে সাধুকে রাখিতে 
আসিলে ধরার বুকে
।।
অবতার যায় আসে পুনরায় 
জীবে দিয়ে যায় শিক্ষা

পূর্ণ অবতার হয় নাই আর
এই বারে হবে রক্ষা
।।
পূর্ণানন্দ হরি সফলা নগরী 
ক্ষীর সিন্ধু ছেড়ে এলে

যশোবন্ত ঘরে পূর্ণার উদরে 
নর রূপ ধারী হলে
।।
প্রথম আবাদ ওহে হরিচাঁদ 
ঘুচালে আপদ সবে

দেবের বঞ্চিত দানব লাঞ্ছিত
ব্রহ্মার কাঙ্খিত ভাবে
।।
ক্ষেত্র সু প্রস্তুত যশোবন্ত সুত
পেল অবধূত তোমা

মিশিল তোমাতে এ বিশ্ব জগতে 
নাহিক গুণেতে সীমা
।।
হরি গুরুচাঁদ পূর্ণিমার চাঁদ 
সুধার আস্বাদ দিলে

তারিলে জগত জগতের নাথ
সবে তোমাগত চলে
।।

পতিত যাহারা হয়ে সর্বহারা 
বাদলের ধারা চোখে

ডাকে দিবারাতি অগতির গতি
বেদনার ছবি মুখে
।।
হয়ে কৃপাবন্ত ও হে প্রাণকান্ত 
করিবারে শান্ত সবে

অনাথ আতুর কান্দিল প্রচুর 
আসিলে ঠাকুর ভবে
।।
নিজে গৃহী সাজে গৃহীজন মাঝে 
করে হরি রাজে লীলা

মানুষের সাথে মিলিয়া সবাতে
কৃপাদণ্ড হাতে খেলা
।।
সব নীতি দিয়ে গৃহীকে সাজায়ে 
নিজে দেখাইয়ে দিলে

পূর্ণ শিক্ষা লাগি ওহে সর্ব্বত্যাগী 
গৃহধর্ম্ম ভোগী হলে
।।
গুণে সীমা নাই নির্গুণ গোঁসাই 
আমি বুঝি নাই তত্ত্ব

জানে হীরামন গোলক লোচন
সঁপে দেহ মন মত্ত
।।
কিবা কর খেলা অনন্ত মেখলা 
ক্ষীরোদের বেলা ভূমে

আনন্দে মাতিয়া ক্ষীরোদ আসিয়া 
চরণে পড়িয়া চুমে
।।
আকাশ বিচিত্র সাজিয়াছে ছত্র 
নাহি কেহ মাত্র আর

আপনা আপনি করেছ মেলানী
সৃষ্টি ছিনিমিনি সার
।।
পলকে গড়িয়া পলকে ভাঙ্গিয়া 
পলকে ধরিয়া বুকে

ভাঙা গড়া খেলা কর নিত্য বেলা 
বসিয়া একেলা সুখে
।।
রূপ গুণহীন আপনাতে লীন
কারণ - বিহীন কান্ত

ইচ্ছা - রস দিয়ে ব্রহ্মাণ্ড সৃজিয়ে 
আপনা ছড়ায়ে শান্ত
।।
জীব কুল যত পলে পলে কত 
তোমাতে আগত দেখি

জীব করে কর্ম্ম জীব কহে ধর্ম্ম
জীবে রাখে মর্ম্ম শিখি
।।
তোমার বিকার সৃষ্টির আকার 
তুমিত সার জানি

যাহা কিছু হয় সকলি তোমায় 
ও হে গুণময় গুণি
।।
মোদের ব্রহ্মাণ্ড ক্ষুদ্র এক ভাণ্ড 
কত যে ব্রাহ্মণ্ড আছে

কেবা তাহা জানে বিভু তুমি বিনে 
কেবা কোন খানে বাঁচে
।।
তোমার কারণে বিবিধ বচনে 
যতই রচনে লিখি

কিছু নাহি হয় যাহা তাহা রয় 
মনে ভাবি হায় একি?
গুণাতীত গুণী লোটায়ে ধরণী 
করি জোড় পাণি বন্দি

কোন কথা নাই জগৎ গোঁসাই 
ভূমে লুটে তাই কাঁন্দি
।।
যাহা ইচ্ছা কর অধম নফর 
কাঁপে থর থর ভয়ে

বিশ্বময় হরি নররূপ ধারী 
রূপের মাধুরী লয়ে
।।
নর জ্ঞান করি এত দিন ধরি 
হয়ে অহংকারী সবে

করিয়াছি হেলা চলে যায় বেলা 
খেলেছি কু খেলা ভবে
।।

 

 

 


অনাদির নাথ কোটী দণ্ডবৎ
কৃপা দৃষ্টি পাত কর

ভুবন পালক দাস যে তারক 
অজ্ঞান পাবক হর
।।

 

স্তব শুনি গুরুচাঁদ কহে প্রীত মনে
শুনহে তারক চন্দ্র আমার বচনে
।।
তোমার হৃদয় ভরা ভক্তি-প্রেম-রসে

হরি প্রেম বিরহেতে নাহি পাও দিশে
।।
তাঁর কান্তি, তাঁর প্রেম সদা হৃদে ভাসে

বিশ্ব-ভরা দেখ শুধু হরি -প্রেম রসে
।।
ভক্তি বন্যা ডুবায়েছে তোমার হৃদয়
 
যাহা কিছু দেখ চোখে সব হরিময়
।।
হরি প্রেম খেলা আমি কিছু নাহি জানি

তার ঘরে লভি জন্ম নিজে ধন্য মানি
।।
তোমাদের সেই হরি ছিল কোন জন

এইখানে এল হরি কিসের কারণ
।।
তোমারা বা কোনভাবে তাঁরে দেখেছিলে

কোন সে পরম ধন তাঁরে কাছে পেলে
।।
সেই সব তত্ত্ব আমি কিছু নাহি জানি

হরি ছিল দিবা তুল্য আমি যে রজনী
।।
তবে এক বাঞ্ছা বটে আছে মোর মনে

ইচ্ছা আছে সেই ধর্ম্ম পালিব জীবনে
।।
মহাপ্রেম বন্যা ঢেউ তুলিয়া জগতে

মম পিতা এসেছিল শ্রী হরি রূপেতে
।।
সেই প্রেম বন্যা আজ দেখহে চাহিয়া

ছুটিতেছে দেশে দেশে নাচিয়া নাচিয়া
।।
যেই ঢেউ তোলে সেই জানে তার মর্ম্ম

আমরত নহে বাপু ঢেউ-তোলা কর্ম্ম
।।
সেই সাথে দিতে তাল আমার বাসনা

আমার বাসনা শোন তারক রসনা
।।
তোমরা রয়েছ যত শ্রী হরির গণ

তোমাদের ভাব আমি বুঝিনা কখন
।।
যদিবা তোমরা সবে আস এই বাড়ী

আমাতে জানিবে সবে বাড়ীর প্রহরী
।।
শ্রী হরির বাড়ী গণি তোমাদের ঘর

কোন দাবী নাহি মোর বাড়ীর উপর
।।
এস কিম্বা যাও চলি কোন বাধা নাই

তোমাদের তালে তাল দিতে আমি চাই
।।
আমি ত সংসারী লোক পুত্র কন্যা আছে

আমার থাকিতে হবে তা'দের পাছে
।।
যা কিছু পেয়েছ সবে ঠাকুরের ঠাঁই

সেই সব তত্ত্ব মোর কিছু জানা নাই
।।
তোমাদের সে ঠাকুর তোমরা তাঁহার

কোন ধার নাহি ধার তোমরা আমার
।।
সকলে হরির গণ তোমরা স্বাধীন

তোমাদের কাছে ভক্তি মুক্তি সব হীন
।।
নহিত ঠাকুর আমি আমাতে কি আছে

বৃথা কেন এলে ছুটে তুমি মোর কাছে”
।।
এত যদি গুরুচাঁদ বলিয়া বচন

তারক কহিলা তবে করিয়া রোদন
।।
কৃপাময় আর ছলা করিওনা কভু

নিশ্চয় জেনেছি তুমি অখিলের বিভু
।।
আমার ঠাকুর আছে কভু যায় নাই

তোমার মধ্যেতে ধরা ক্ষীরোদের সাঞী
।।
বুঝি বা না বুঝি প্রভু তবু এই কই
 
তোমা মধ্যে হরিচাঁদ আছে বসে ওই”
।।
নীরবে তারক কান্দে ঠাকুর নীরব

ভক্ত ঠাঁই ভক্তাধীন মানে পরাভব
।।
এবে শুন কি করিল গোস্বামী গোলক

হরি বিনে দেহে দহে জলন্ত পাবক
।।
সদা মন উচাটন গোস্বামী বেড়ায়

কোন স্থানে তিল মাত্র শান্তি নাহি পায়
।।
ইতি উতি চলে সাধু চোখে নাহি ঘুম

কদাচিৎ বাক্যালাপ নীরব নিঝুম
।।

গোস্বামীর ভ্রাতুষ্পুত্র নাম মহানন্দ
নামে গানে মত্ত যেন প্রভু নিত্যানন্দ
।।
একদা নিরালে বসি সেই মহাশয়

কর জোড় করি তবে গোস্বামীকে কয়
।।
ভয় পাই প্রভু পাদ করিতে জিজ্ঞাসা

তথাপি রাখিতে নারি মনের পিপাসা
।।
যেই হতে হরিচাঁদ দেহ রাখিয়াছে

সেই যেন তব প্রাণ কোথা চলে গেছে
।।
কায়া মাত্র ছায়া সম যেন রাখিতেছে

দয়া করি বল কেন এ ভাব ধরেছে?
তব মুখে পূর্ব্ব কালে শুনেছি বারতা

সাধুর জীবন মৃত্যু নহে দুই কথা
।।
শোকেতে কান্দেনা তারা সুখেতে না হাসে

সুখ দুঃখ সমভাব তাহাদের পাশে
।।
তবে কেন হরি বিনে শোকেতে কাতর

শূন্য মনে সারা গাত্র কাঁপে থর থর
।।
দয়া করি যদি প্রভু বলহে কারণ

সুস্থ হয় শান্তি পায় এ দাসের মন
।।
মহানন্দ বলে যদি এ হেন বচন

গোস্বামী গোলক কহে দুঃখে ভরা মন
।।
শুন শুন মহানন্দ ওরে বাছাধন

কি কারণে দেখ মোর মলিন বদন
।।
সুখ দুঃখ এক কথা চিত্তের বিকার

সাধুগণ নহে কভু বাধ্য যে তাহার
।।
দারা পুত্র স্বজনাদি সম্বন্ধ যা রয়

সে সব বিয়োগে বটে মনে দুঃখ হয়
।।
অসার সংসার ইথে নাহিক সম্বন্ধ

তাহে সুখ দুঃখ শুধু মায়া পাশে বদ্ধ
।।
আর দেখ স্বজনাদি হইলে বিয়োগ

কিছুকাল আত্মজনে করে দুঃখ ভোগ
।।
কালে কালে সেই দুঃখ দু ' দিনে ফুরায়

শোক - ব্যথা ভুলে সবে হাসি কথা কয়
।।
ক্ষণিকের শোক - ভোগ ক্ষণিকে বিলয়

মোর বুকে যেই শোক সেই শোক নয়
।।
এ যে কি আগুন পোড়া নাহি পাই দিশে

দহিছে আমাকে সদা হরি - হারা বিষে
।।
শত পুত্র শত পত্নী যদি ছেড়ে যায়

তথাপিহ এই শোকের তুলনা না হয়
।।
শোক দুঃখাতীত ছিল প্রাণের ঠাকুর

দেখিলে সে মুখচন্দ্র দুঃখ হত দূর
।।
সে যে মোর কেবা ছিল কহনে না যায়

অহর্নিশি প্রাণ পোড়ে বুক ফেটে যায়
।। 
স্বজনাদি বলে যারে নর সাধারনে

সম্বন্ধ পাতিয়া কত সুখ পায় মনে
।।
সাধুজনে জানে তাহা ক্ষণিকের মায়া

তাই পাশরিতে পারে সুখ - দুঃখ ছায়া
।।
যেই মায়া করে নর দারা পুত্র প্রতি

যেই মায়া পতি পদে রাখে তার সতী
।।
কৃপনের যেই মায়া নিজ ধন পরে

যেই মায়া করি মাতা বক্ষে পুত্রে ধরে
।।
ততোধিক মায়া মোর আছে হরি প্রতি

এ মায়া অক্ষয় মায় মোর চির সাথী
।।
স্বজনাদি জানি সব অলিক কল্পনা

কল্পনার পিতা হরি নাহিক তুলনা
।।
স্বজন বিয়োগ ব্যথা দু ' দিনে ফুরায়

চিরসাথী বান্ধবেরে কি সে ভোলা যায়?
ভোলার প্রাণের ধন কিসে ভুলি তাঁরে?
তাঁরে ভোলা সব ভোলা ভুলি কি প্রকারে?
আমি জানি কোন ধর্ম্ম শুন দিয়া মন

যেই ধর্ম্মে সতী পূজে ' শিবের চরণ
।।
পিতৃগৃহে পতি নিন্দা শুনিয়া জননী

অশুচি ভাবিয়া তনু ত্যাজিল তখনি
।।
শুচি - শুদ্ধা হেন সতী যাঁরে ছাড়ি যায়

মহাকাল হ 'লে বাকি শোকে মৃত প্রায়
।।

 

গুণমণি সতীদেহ স্কন্ধেতে ধরিয়া
ঘুরিল পাগল শিব জগত ভরিয়া
।।
সুদর্শন চক্রে তবে প্রভু নারায়ন

খণ্ডে খণ্ডে সতীদেহ করেন খণ্ডন
।।
ভবেশ বুঝিলা স্কন্ধে সতীদেহ নাই

বিরস বদনে ভোলা ঘন ছাড়ে হাই
।।
আপনার মাঝে ভোলা আপনি ডুবিল

মহাযোগে হয়ে মগ্ন সমাধিস্থ হ'
।।
এ দিকেতে মহাসতী পার্ব্বতী রূপেতে

গিরিরাজ পুরে এল জগত তারিতে
।।
আলোক সম্ভূতা কন্যা রূপে সীমা নাই

গিরি ভাবে কন্যা যোগ্য বর কোথা পাই
।।
সতী জানে পতি তাঁর আছে যোগাসনে

জন্মে জন্মে পতি ভোলা, অন্যে নাহি জানে
।।
খেলা ছলে চলে দেবী কানন ভিতরে

দূর হ'তে ভোলানাথে আনন্দে নেহারে
।।
দেখ মাত্র জগন্মাতা পতিকে চিনিল

দেহ মন প্রাণ দেবী পদে সমর্পিল
।।
পতি পেতে ভুল পথে সতী লাজ পায়

লভিলা কৈলাস পতি তীব্র সাধনায়
।।
জন্ম ফিরে গেল তবু সতী নাহি ফিরে

যেই পতি সেই পতি জন্ম জন্মান্তরে
।।
অতীতের সেই ধর্ম্ম সদা জাগে মনে

যেমনি মা তেমনি ছা ' শাস্ত্রের বচনে
।।
বর্ত্তমানে দিকে দিকে দেখি ব্যভিচার

পতিহারা পতিরূপে মাগে অন্য নর
।।
শাস্ত্র বাক্য বলি কহে কতই যুক্তি

পতি হারা লালসায় ভজে অন্য পতি
।।
প্রাণনাথ প্রাণকান্ত প্রভু হরিশ্চন্দ্র

সে বিনে দিবসে রাত্রি, চক্ষু মোর অন্ধ
।।
শ্রী হরির বিরহ বিষে অসহ্য যাতনা

হরি বিনে পোড়া প্রাণ বুঝি বা বাঁচেনা
।।
শ্রী হরির পোষা পাখী মোরা যত জন

হরি বিনে তিলে তিলে হবে যে মরণ
।।
আমি জানি গুরুচাঁদ এল কোন জন

ব্রহ্মা বিষ্ণু করে ধ্যান তাঁহার চরণ
।।
তবু মনে হয় মোর যেই দেহ দিয়া

হরিপদ পূজিয়াছি পরাণ ভরিয়া
।।
সেই দেহ সেই রূপ ভিন্ন অন্য রূপে

নাহি দিব না পারিব দিতে কভু সঁপে
।।
এই দেহ এই প্রাণ হরিচাঁদ নিছে

আর না বিকা'ব প্রাণ আর কা'র কাছে
।।
হরি সম্বরিতে রূপ, সেই রূপ নাই

এই রূপ ছেড়ে তবে আমি সাথে যাই
।।
হরি শক্তি দিয়া গেছে প্রভু গুরুচান্দে

আমি দিয়া যাব শক্তি তো'কে মহানন্দে
।।
আমি যথা সেবিয়াছি শ্রী হরির পদ

সেই ভাবে পূজা কর প্রভু গুরুচাঁদ
।।
এত বলি শ্রী গোলক নীরব হইল

নীরবে শ্রী মহানন্দ কাঁদিতে লাগিল
।।
মহানন্দ দেখে ভেবে ভাবনা যে মিছে

ছেড়ে গেছে শ্রী গোলক ছায়া মাত্র আছে
।।
ইহ পরে সে গোলক দেশে দেশে ঘুরি

ঘরে ঘরে এল ঘুরি বলে হরি হরি
।।
প্রাণ শূন্য দেহ বল রহে কত দিন

নিদারুণ শূলে তার দেহ করে ক্ষীণ
।।
ইতি উতি ঘুরি প্রভু শ্রী গোলক চন্দ্র

মৃত্যু কালে করিলেন তারকের সঙ্গ
।।
জয়পুর গ্রামে আসি তারকের ঘর

দেহ রক্ষা করিলেন কোলের উপর
।।
উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক প্রায় এক জ্যোতিঃ উঠি

আকাশ ভেদিয়া চলে পূর্ব্ব দিকে ছুটি
।।
তারক দেখিল জ্যোতিঃ যায় পূর্ব্ব দিশি

মহানন্দের অঙ্গেতে হল মিশামিশি
।।

 

সেই মহানন্দ তবে হ'ল শক্তিমন্ত
হরি লীলামৃতে আছে সে সব বৃত্তান্ত
।।

গুরুচাঁদ পদে নিষ্ঠা রাখি মহাশয়
দিবানিশি ঘরে ঘরে হরিনাম বিলায়
।।
শ্রী গুরুচাঁদেরে জানে সাক্ষাৎ ঈশ্বর

হরি গুরুচাঁদ তত্ত্ব করিত প্রচার
।।
তাহার যতেক লীলা বিবিধ প্রকারে

প্রচারিত হরি লীলামৃতের ভিতরে
।।
এবে পুনঃ মূল সূত্রে করিব বারতা

অন্য কোন ভক্তে তবে বলে কোন কথা
।।
বারশ ' পঁচাশি সালে জৈষ্ঠ মাস হল

শ্রী রামভরত সাধু পুনঃ ফিরে এল
।।
ওড়াকান্দী এসে দেখে হরি দেহে নাই

ভূমিতে পড়িয়া সাধু কেন্দে ছাড়ে হাই
।। 
মহাপ্রভু গুরুচাঁদ নিকটে আসিল

তাঁর দরশনে ব্যথা দ্বিগুণ বাড়িল
।।
কেন্দে বলে “বড় দাদা বাবা গেল কোথা

তাঁরে বিনে এ জীবনে বেঁচে থাকা বৃথা
।।
তুমি ত জানিতে দাদা ভাঙ্গিবে কপাল

তবে কেন ছেড়ে দিলে পরম দয়াল
।।
তুমি যদি জোর করে বলিতে তাঁহারে

নিশ্চয় যেত না হরি ছাড়িয়া সবারে
।।
কোটী জন্ম সুকৃতির ভাগ্য ছিল ভাই

অযোধ্যা হইতে বঙ্গে এসে তাঁরে পাই
।।
ভুবন মোহন বেশে দেখিলাম তারে

কোন গুণে গুণমণি ভুলা'ল আমারে
।। 
রাম মন্ত্রে উপাসনা ছিল যে আমার

হরিচাঁদে দেখে গেল চিত্ত - অন্ধকার
।।
মন প্রাণ হরি মোর করিল উতলা

তাঁরে বিনে মনো ব্যথা কারে যায় বলা ?
রাম নামে দেহে বল হাতে ছিল যষ্ঠি

মনে হত নাশিবারে পারি এই সৃষ্টি
।।
তখন বুঝিনি দাদা সেই বল বৃথা

সকল বলের বল হরিচাঁদ পিতা
।।
তাঁরে দেখে গেল বল যষ্ঠি গেল পড়ে

কাঙ্গাল সাজিনু আমি সব সজ্জ্বা ছেড়ে
।।
কাঙ্গাল করিল মোরে কাঙ্গালের নাথ

আত্মা কেড়ে নিয়ে করে মোরে আত্মসাৎ
।।
হরিচাঁদে আত্মা দিয়া দেশে দেশে ঘুরি

মনে হয় বিশ্ববাসী আমার প্রহরী
।।
মনে ভাবি আমি মূঢ় এতই অজ্ঞান

কেন ভয় করি? পিছে আছে হরিচাঁন
।।
প্রাণের দোসর ভাই রসিক সুজন

সেই মোরে দেখাইল হেন রত্ন ধন
।।
এমন বান্ধব আর নাহি ত্রিভুবনে

দিনমানে রাত্রি হল হরিচাঁদ বিনে
।।
আ রে রে পাপিষ্ঠ প্রাণ দেহে কেন র'স্

হরিপদে দাসী সেজে কার দাসী হ'স্
।।
আ রে রে নয়ন অন্ধ দেখি কিবা আর

হরিরূপ বিনে দেখি সব অন্ধকার
।।
আরে আরে জড় জিহবা কিবা ক'স্ কথা

হরিচাঁদ বিনে গাবি কার গুণগাঁথা
।।
ওহো রে দুর্ব্বল হৃদি কি বসাবি বুকে

স্পর্শ মনি হরিচাঁদ যদি নাহি থাকে
।।
আরে আরে বদ্ধ কর্ণ কিবা গান শুনি

যদি নাহি বাজে হৃদে হরিচাঁদ ধ্বনি
।।
পাষাণ পরাণ মোর নাহি দয়ামায়া

নিষ্ঠুর হইয়া রহে নাহি ছাড়ে কায়া
।।
ত্রিভুবনে বন্ধু নাই এবে তাই দেখি

হরি - শূন্য এ জীবনে বেঁচে কেন থাকি”
।।
আছাড়ি পাছাড়ি সাধু করে কান্দাকান্দি

বলে “অন্ধকার হল ক্ষেত্র ওড়াকান্দী “
।।
তবে প্রভু গুরুচাঁদ বাহুড়ি আসিল

শ্রী রাম ভরতে তবে কহিতে লাগিল
।।

 

 

তবে প্রভু গুরুচাঁদ বাহুড়ি আসিল
শ্রী রাম ভরতে তবে কহিতে লাগিল
।।
শুন মিশ্র অবিমিশ্র নহে ত জীবন

জন্মিলে মরিতে হবে বিধির লিখন
।।
হরিচাঁদ গেছে চলি কথা মিথ্যা নয়

যুগে যুগে এই ভাবে খেলা তাঁর হয়
।।
তাঁহারি সৃজিত বিশ্ব সে বিশ্ব চালায়

তাহা হয় যাহা ইচ্ছা করে ইচ্ছাময়
।।
মোরা ত পুতুল মাত্র সে যে খেলোয়াড়

খেলুক যে খেলা ইচ্ছা হয়েছে তাঁহার
।।
মনে ভাবিতেছে হরিচাঁদ আজি নাই

মোর মনে বলে ইহা ঠিক নহে ভাই
।।
যাঁর আজ্ঞা ক্রমে চলে চন্দ্র সূর্য তারা

যাঁরে দেখে ঢালে মেঘ সুধা-বারি ধারা
।।
যাহার ইঙ্গিতে বায়ু বহিছে সদায়

কল কল নদী নদ যাঁর গুণ গায়
।।
প্রভাত আলোক দেখি যার মধু হাসি

সন্ধ্যার আঁধারে রহে কাল রূপ রাশি
।। 
প্রচণ্ড মধ্যাহ্নে দেখি যাঁর রুদ্র মূর্ত্তি

পাহাড় ধ্যানেতে মগ্ন রেখে যাঁহে আর্ত্তি
।।
জননীর বুকে সুধা যে -জন জোগায়

ফলে ফুলে বসুধারে হাসায় নাচায়
।।
জীব প্রতি স্নেহ প্রীতি দয়া, ক্ষমা রূপে

ভায়ার্ত্তের বুকে যেবা ভয় হয়ে কাঁপে
।।
কল্পনারে দিয়ে রূপ জগৎ গড়ায়

অনু পরামানু জুড়ে সে যে বিশ্বময়
।।
সে কেন ছাড়িয়া যাবে এই কোন কথা

সে নাই সে নাই “ ভাই ভাব তুমি বৃথা
।।
কোথা আছে সেইজন খুঁজে তারে দেখ

ব্যাকুলতা দূর করে সুস্থ হয়ে থাক “
।।
গুরুচাঁদ মুখে শুনি এই তত্ত্ব বাণী

প্রণমি শ্রীপদে সাধু দাঁড়াল অমনি
।।
বলে “দাদা আমি আঁধা বোধশক্তি নাই

দয়া করে মোরে তবে রাখ তুমি ভাই
।।
শ্রী গুরু ডাকিয়া বলে “থাক থাক থাক

প্রাণ ভরি ' হরিচাঁদে হেথা বসে ডাক
।।
সুস্থির হইয়া সাধু রহে ওড়াকান্দী
 
হরি বলে ঘুরে ফিরে উঠে কান্দি কান্দি
।।
এবে শুন কোন্ কথা কহে হরিপাল

কোন্ ভাবে দয়া করে পরম দয়াল
।।
তাঁহার রচিত কথা বড়ই মধুর

তাঁরে বহু কৃপা কৈল শ্রী হরি ঠাকুর
।।
ধন্য শ্রী পরম সাধু নাম হরিপাল

স্বচক্ষে দেখিল যিনি পরম দয়াল
।।
কুম্ভকার বংশে জন্ম যশোহর জিলা

তারে নিয়ে হরিচাঁদ করে কৃপালীলা
।। 
হরিলীলামৃত গ্রন্থে কবি রসরাজ

লিখিয়াছে শুনিয়াছে ভক্ত সমাজ
।।
উদ্দেশে মতুয়া হ'ল সেই মহাশয়

সূর্যনারায়ন সাধু তারে পদ কয়
।।
ওড়াকান্দী যাবে বলি করে আনাগোনা

যাব যাব বলি শীঘ্র যাওয়া হ'ল না
।।
এমন সময় প্রভু দেহ তেয়াগিল

হরিপাল শুনি বার্ত্তা মনে ব্যথা পেল
।।
মনে ভাবে কি দুর্ভাগ্য আমি অভাজন

জীবমানে না দেখিনু প্রভুর চরণ
।।
বুকে ব্যথা পুষি, সাধু ইতি উতি ধায়

কল্পনাতে হরিরূপ সতত ধেয়ায়
।।
কাষ্ঠ কাটিবারে তার নৌকা কতখান

দক্ষিণেতে বাদা মধ্যে করিল প্রয়াণ
।।
কিবা সে চক্রির চক্র বোঝা বড় দায়

দৈব চক্রে নৌকা তার জলে ডুবে যায়
।।
গদাই নামেতে সেথা দুষ্ট একজন

ইচ্ছা করে তার ধন করিতে হরন
।।
নানা ছলে সেই খল হরিপালে নিল

ব্যাঘ্রের কবলে ফেলি নাশিতে ইচ্ছিল
।।

নানা ছলে সেই খল হরিপালে নিল 
ব্যাঘ্রের কবলে ফেলি নাশিতে ইচ্ছিল
।।

ব্যাঘ্র দেখি হরিপাল সব বুঝি লয়
বিপদে পড়িয়া ডাকে “ কোথা দয়াময়!
পরম নির্ভর সাধু করে এক মনে

উপনীত হরিচাঁদ ভক্তের কারণে
।।
ভক্তের স্কন্ধেতে বসি পদ দোলাইয়া

ইঙ্গিতে তাড়াল ব্যাঘ্র সদয় হইয়া
।।
কমলা - সেবিত পদ শিবের সম্পদ

প্রতি লোমকূপে ফুটে আছে কোকনদ
।।
নিটোল মধুর হেরি চরণের শোভা!
কল কল নাচে গঙ্গা সাধু মনোলোভা
।।
চরণ পরশে এল হরিপালে হুস্

কেন্দে বলে “কেবা তুমি সোনার মানুষ “
।।
স্কন্ধে থেকে প্রভু বলে “শুন হরিপাল

আমাকে চিনিবে যদি কাট মায়াজাল
।।
ওড়াকান্দী হ'তে আমি আসিয়াছি হেথা

বুঝিতে পারিবে পরে সেই সব কথা
।।
মনে মনে যার রূপ ভেবেছ সদায়

ওড়াকান্দী গেলে তার তত্ত্ব মিলে যায় “
।।
এত বলি হরি তবে মিলা'ল বাতাসে

প্রেমে পুলকিত হরিপাল দেশে আসে
।।
মনে ভাবে হরিপাল এই কোন কথা

হরি চলে গেছে শুনি এ কোন বারতা
।।
হরি যদি গিয়ে থাকে ওড়াকান্দী হতে

আমাকে রাখিল কেবা গহন বাদাতে
।।
হতে পারে কায়া কান্তি ছাড়িয়াছে হরি

নিশ্চয় রয়েছে হরি ওড়াকান্দী বাড়ী
।।
শুনিয়াছি প্রভু পুত্র গুরুচাঁদ যিনি

শ্রীধামের কর্ত্তা এবে হয়েছেন তিনি
।।
সন্দেহ আমার মনে বাড়িয়াছে বটে

কোন গুণে গুরুচাঁদ বসে হরি - পাটে
।।
হয় হরি অশরীরী আছে ওড়াকান্দী

নয় গুরুচাঁদ দেহে হইয়াছে বন্ধি”
।।
ইতি উতি মনে ভাবি সাধু হরিপাল

যাত্রা করে ওড়াকান্দী চক্ষে বহে জল
।।
উপনীত শ্রীধামেতে বহু লোক সঙ্গে

দেখে গুরুচাঁদ আছে হাসির তরঙ্গে
।।
খল খল হাসি ওঠে বালক সমান

অপরূপ কান্তি দেখি হরি লয় প্রাণ
।।
হস্ত নাচাইয়া প্রভু বলে তত্ত্ব কথা

শুনিলে জুড়ায় হিয়া দূরে যায় ব্যথা
।।
অপলক দৃষ্টে চাহি সাধু হরিপাল

বুক বেয়ে ছোটে তার নয়নের জল
।।
মনের সংশয় তার দূর হয়ে গেল

গুরুচাঁদে হরিচাঁদ নিশ্চয় বুঝিল
।।
অকস্মাৎ দণ্ডবৎ করে ভূমে পড়ে

প্রভু কয় একি দায় তুলে ধর ওরে
।।
জিজ্ঞাসা করেন প্রভু 'তুমি বাপু কেটা '?
হরিপাল বলে আমি গোলকের বেটা
।।
নাম মোর হরিপাল বাড়ী যশোহর

দয়া করি কর মোরে আপন নফর '
।।
হাসি হাসি বলে প্রভু করিয়া রহস্য

গুটি কত কথা বাপু বলিব অবশ্য
।।
জন্ম তব পাল বংশ উচ্চ বংশ জাত

কেন ক্ষুদ্র নমঃশুদ্রে কর প্রণিপাত ?
শুন শুন হরিপাল বলি তব ঠাঁই

এমত অবিধি কার্য আশা করি নাই
।।
তোমাদের আছে মনে জাতিতে কুলীন

হীন জনে প্রণমিয়ে কেন হও হীন ?
প্রভু যদি এই কথা বলে তার আগে

শেল-সম সেই কথা হরিপালে লাগে
।।
কেন্দে কয় “রসময় কি আর বলিব

তুমি যে বিশ্বের প্রভু তুমি জান সব
।। 
যুগে যুগে এসে তুমি কত কথা বল

ভুলে গিয়ে নরগণে মানেনা সকল
।।

কলিকালে লীলাছলে এলে নদীয়ায়
নররূপে শচী ঘরে হলে গোরা রায়
।।
ভক্তির কন্টক পঞ্চ কর নিরুপণ

জাতি বিদ্যা রূপ আর মহত্ব যৌবন
।।

জাতি-বিদ্যা-মহত্বঞ্চ রূপ যৌবনমেবচ
পঞ্চৈব ভক্তি কন্টকাঃ যত্নেন পরিবর্জ্জয়েৎ “
।।

সাধ্য মত ভক্ত গণ বর্জ্জন করিবে
তবে প্রেম রূপা রাধা হৃদয়ে বসিবে
।।
উচ্চ কুলে জন্ম লয়ে করি যে বড়াই

উচ্চ বৃক্ষ ঝড়ে ভাঙ্গে ফল প্রাপ্তি নাই
।।
কুলে বড় রূপে বড় বিদ্যাতে মহৎ

যৌবনের গর্ব্বে মত্ত যতেক অসৎ
।।
কুলে দেখি কুল নাই অকুলেতে ভাসি

অকুলে কাণ্ডারী পাই ওড়াকান্দী আসি
।।
আর সেই যুগে বল অপূর্ব্ব বারতা

কোনজনে আছে ভক্তি, ভক্তি রহে কোথা
।।
তৃণ হতে হীন হবে অমানীকে মান

তরু - সম সহিষ্ণুতা হরি গুণগান
।।

তৃণাদপি সুনীচেন, তরুরিব সহিষ্ণুতা
অমানীন মানদেন কীর্ত্তনীয়া সদা হরিঃ “
।।

উচ্চ কুল বলি প্রভু বলিল যাহারে
তৃণাদপি শ্লোক স্পর্শ করে না তাঁহারে
।।
এই জীবনের প্রভু কোন মূল্য নাই

তৃণাদপী শ্লোক মর্ম্ম ভক্ত হ'তে পাই
।।
তাহার প্রমাণ প্রভু মহাজনে বলে

হরি ভক্তি বিনা জন্ম যায় যে বিফলে
।।

হরি ভক্ত হয়ে বরং বাঁচে পঞ্চ দিন
বৃথা সে সহস্র কল্প হরি ভক্তি হীন “
।।

--- শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত

আজি বঙ্গে যত দেখি উচ্চ উচ্চ কুল
জাতি গর্ব্বে মত্ত হয়ে নাহি চিনে মূল
।।
তাদেরি পূর্ব্ব পুরুষে লিখে গ্রন্থ মালা

পিতৃ পুরুষের বাক্য কে কবে মানিলা
।।
শাস্ত্র গ্রন্থ পুরাণাদি কহিছে প্রমাণ

হরি ভক্তি হীন দ্বিজ নাহি পাবে ত্রাণ
।।
উচ্চ বর্ণ ঘৃণা করি কহে নীচ বর্ণ

চণ্ডালাদি আখ্যাদেয় এমনই জঘন্য
।।
সেও যদি কর্ম্ম গুণে হরিভক্ত হয়

দ্বিজ হতে শ্রেষ্ঠ গণি নমি তার পায়
।।

চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠঃ হরি ভক্তি পরায়নঃ
হরিভক্তি বিহীনশ্চ দ্বিজোহপি শ্বপচধমঃ “
।।

কুলে কিবা করে প্রভু মূলে সব মিলে
স্বর্গে হয় ঘন্টা ধ্বনি রুহিদাস খেলে
।।
হরি ভক্ত শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা করিবার তরে

কৃষ্ণ বলে যুধিষ্ঠিরে রাজসূয় পরে
।।
নকুলের মুখে শুনি অদ্ভুত বারতা

কৃষ্ণ বলে “যুধিষ্ঠির শুন মোর কথা
।।
অশ্বমেধ রাজসূয় অতিথি সেবন

সবা হতে শ্রেষ্ঠ হয় সাধুর ভোজন
।।
দেব দৈত্য, যক্ষ রক্ষ নর আদি কত

রাজা রাণী, ব্রাহ্মণাদি রাজ পুরোহিত
।।
সকলের করি সেবা পায় নাই ফল

রুহিদাস খেয়ে দিল সর্ব্ব-সিদ্ধি-ফল
।।
কুলে গোত্রে এরা সবে ছিল বটে হীন

ভক্তি গুণে হল তারা সবার প্রবীণ
।।
এই মত লক্ষ লক্ষ সাধু দিবারাত্রি

যাঁর পদ তীর্থ আসে হয়ে আছি যাত্রী
।।
সাধু - জন - মন - ধন অতুল রতন
 
অকুলের কুল তুমি শ্রী গুরুচরণ
।।

 

 

 

 

 

 

কুলে নাহি পাব কুল তব কুলে যেতে
কুল - হারা কুল পাবে তোমার কুলেতে
।।
কুল ফেলে কুলে এসে তব কুলে রই

কুলে আর কুল প্রভু আছে বল কই ?
কুল হারা হরিপালে পদকুলে রাখ

করুণা করিয়া কান্ত! কৃপা নেত্রে দেখ
।।
ভক্তমুখে শুনি বাণী ভক্ত পরাণ

বলে হরিপাল তুমি পালের প্রধান
।।
হরিধনে দেখিবারে মনে ছিল আশ

বল হরি হবে হরি! ধন,মান, যশ '
।।
গুরুচাঁদ আজ্ঞা ক্রমে হরিপাল তবে

ঘরে ঘরে হরিনাম বিলাইল সবে
।।
সকলে জানিল হরিচাঁদ যায় নাই

গুরুচাঁদ মধ্যে দেখে ক্ষীরোদের সাঁই
।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ অভেদ হইল

দীন মহানন্দ বলে হরি হরি বল
।।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রণাম

নমি পদে কবি গুরু শ্রী তারক চন্দ্র
যাঁর শিরে সদা রাজে প্রভু হরিশ্চন্দ্র
।।
গুরুচাঁদ মধ্যে হরিচাঁদে যে দেখিলা

হরি - প্রেম - রসে ডুবি বিশ্ব মাতাইলা
।।
অমর লেখনী যাঁর রচে লীলামৃত

দন্তে তৃণ ধরি পদে করি দণ্ডবৎ
।।
কৃপা করি কবি গুরু দেহ আশির্ব্বাদ

পদ চিহ্ন হেরি যেন পুরে মনোসাধ
।।
আমি ত অজ্ঞান গুরু! নাহিক সাধনা

শ্রী গুরু - চরিত লিখি মনের বাসনা
।।
তব কৃপা বিনে দেব সেই সাধ্য নাই

কর কৃপা কৃপাময় কৃপা ভিক্ষা চাই
।। 
জ্ঞান বুদ্ধি বিদ্যা আজি কিছু মোর নাই

দয়া হ'লে সেই বলে যদি কিছু পাই
।।
নরদেহ যবে ছিলে পবিত্র মূরতি

দরশনে বুঝি নাই এমনি দুর্ম্মতি
।।
আজি দেহে নাই তুমি দয়াল ঠাকুর

তব বাসে আসিয়াছি ভ্রমি বহুদূর
।।
শূন্যগৃহে প্রতি ধুলিকণা আজি কহে

দেহ নাই শুধু স্মৃতি এই গৃহে রহে
।।
তোমার স্মরণে দেব বুকে বাজে ব্যথা

ওগো প্রভু দয়া ক'রে কহিবে কি কথা?
কথা কও রসরাজ চাহ হাসিমুখে

কাতর সন্তানে ডাকে দুঃখ নিয়া বুকে
।।
তোমার দয়ার শুনি তুল্য দিতে নাই

তব দয়া পাব হেন সাধ্য কোথা পাই?
মম গুরু শ্রী গোপাল সাধু শিরোমণি

তব দয়া পেয়ে ধন্য ইহা আমি জানি
।।
তোমার কৃপার পাত্র তাঁরে বাসো ভালো

তাঁর গুণে কবি গুরু মোরে দেহ আলো
।।
শ্রী গুরু-চরিত দেখি মহা সিন্ধু প্রায়

উত্তরিতে সেই সিন্ধু সাধ্য মোর নয়
।।
কৃপাতরী দয়া করি আজি মোরে দেহ

পদানত দাস বলি মোরে তুমি লহ
।।
হরি লীলামৃত গ্রন্থ যে ভাবে রচিলে

শ্রী গুরু-চরিত লেখ বসি হৃদি-মূলে
।।
কিবা বুঝি কিবা জানি, কিবা কহি ছাই

বোঝা জানা কহা মোর কিছু ঠিক নাই
।।
ভরসা কেবল মোর গোপালের দয়া

সেই গুণে যদি প্রভু দেহ পদ ছায়া
।।
আসিয়া তোমার বাসে তাই এই দিনে

দীন মহানন্দ কান্দে পড়িয়া চরণে
।।
ভরসা নাহিক আর তব দয়া বিনে

কর দয়া রসরাজ নিজ - দয়া - গুণে
।।

 

শ্রী রাম ভরত মিশ্রের মহাপ্রস্থান

 

বার'শ পঁচাশি সালে জ্যৈষ্ঠের প্রথমে
শ্রী রাম ভরত এল ওড়াকান্দী ধামে
।।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হরিচাঁদ অদর্শনে ব্যাকুলিত মন
তাঁরে শান্ত করি রাখে শ্রী গুরুচরণ
।।
সেই সাধু তবে রহি ওড়াকান্দী ধামে

অবিরাম প্রেম ভরে মত্ত হরিনামে
।।
ক্ষণে ক্ষণে ছাড়ে হাই “ হরিচাঁদ “বলি

তাঁর ভাব হেরি কাঁন্দে ভকত মণ্ডলী
।।
গভীর নিশিথে সাধু বসি বৃক্ষ তলে

গুরুচাঁদে ডাকি কত মনোকথা বলে
।।
কি জানি কি তত্ত্ব কহে বসি দুই প্রভু

কেহ না জনিতে পারে সেই তত্ত্ব কভু
।।
ক্রমে ক্রমে গুরুচাঁদ সংসারে প্রবেশে

শ্রী রাম ভরত তবে আঁখি জলে ভাসে
।।
বাণিজ্য কারণে প্রভু সদা ব্যস্ত রয়

দেশে দেশে গুরুচাঁদ তরণী পাঠায়
।।
এবে মনে হ'ল আশা বন্দরের স্থানে

করিবেন ব্যবসায় বাসিন্দা দোকানে
।।
গৃহীর পরম বল অর্থ মহাশক্তি

মহাশক্তি লভিবারে প্রভু করে যুক্তি
।।
যাঁর ঘরে মহাশক্তি রহে লক্ষ্মীরুপে

তাঁর কেন খোঁজাখুজি অর্থের পাদপে?
জীব শিক্ষা লাগি প্রভু করে যত কর্ম্ম

যাহা করে প্রভু মানে জীবে সেই ধর্ম্ম
।।
হরিচাঁদ রূপে প্রভু ক্ষেত্র বানাইল

গুরুচাঁদ রূপে তাহে বীজ বুনাইল
।।
প্রথম আবাদ কালে যত ভক্ত জন

কর্ম্ম শেষ হল তাঁরা ভাবে মনে মন
।।
তাই যবে হরিচাঁদ রূপ লুকাইল

অগ্রে পরে সব ভক্ত বিদায় লইল
।।
যার কর্ম্ম তার সাজে অন্য গণ্ডগোল

শৃঙ্খলা রাখিয়া চলে ভক্ত সকল
।।
হরিচাঁদ রূপ - ধ্যায়ী যত ভক্ত ছিল

সেই রূপ চিন্তা করি সে রূপে মিশিল
।।
শ্রী রাম ভরত তবে এক নিশিকালে

ভকতি করিয়া কথা গুরুচাঁদে বলে
।।
চরণে বিদায় মাগি শুন বড় দাদা

হরিচাঁদ-রূপ ভাবি মন কাঁন্দে সদা
।। 
যেই লীলা প্রকাশিতে তোমা ' রাখি পাছে

পরম দয়াল মোর রূপ লুকায়েছে
।।
সেই লীলা প্রকাশিতে জগৎ তরাও

আমাকে করিয়া কৃপা চলে যেতে দাও
।।
গৃহীজন আছে লয়ে গার্হস্থ্য জীবন

সে জীবনে নাহি মজে আমার যে মন
।।
উদাসী সাজিয়া আমি যাব দেশে দেশে

দেখি হরিচাঁদ যদি দেখা দেয় এসে
।।
গৃহ ত্যাগী দেখ মোর বাড়ী ঘর নাই

পথসার করি এবে ঘুরিয়া বেড়াই
।।
গৃহস্থ জনেরে দেখ গৃহস্থ সাজা ' য়ে

মনে হলে এসে যাব তোমাকে দেখিয়ে
।।
গৃহস্থজনের বন্ধু পরম দয়াল!
তব পাদস্পর্শে ধন্য হইবে কাঙ্গাল
।।
প্রতি বৎসরে আসি শ্রী বারুণী দিনে

অলক্ষ্যে থাকিয়া লীলা দেখিব নয়নে
।।
গৃহস্থ জনের দেখ বহু ত্রুটি আছে

আমি র'লে ক্ষমা নাহি পাবে মোর কাছে
।।
গৃহস্থ আশ্রম ছাড়ি তাই দূরে থাকি

তারহে গৃহস্থ জনে মোরা বসে দেখি
।।
মম পক্ষে ঘর বাড়ী বড়ই জঞ্জাল

জঞ্জালের মধ্যে থাকি কিবা পাব ফল
।।
বিশ্ব ঘুরে দেখি কোথা কোন ভাবে হরি

করেছে কেমন লীলা আপনা সম্বরি
।।
তব আজ্ঞা বিনা মোর যেতে সাধ্য নাই

তাই পদে মনোসাধে এই ভিক্ষা চাই
।।
শ্রী রাম ভরত যদি এই কথা বলে

আজ্ঞা দিল গুরুচাঁদ “ যাহ “ “যাহ “ বলে
।।

 


অন্তর্যামী গুরুচাঁদ অন্ত নাহি যাঁর

অন্তর বুঝিয়া চলে এই ভাব তাঁর
।।
শ্রী রাম ভরতে ডাকি প্রভু বলে কথা

প্রতি বারুণীতে এসো রহ যথা তথা
।।
স্বীকার করিল সাধু পদতলে পড়ি

শ্রী হরি করিয়া অম্নি করিল “ শ্রী হরি “
।।
মাঘী পূর্ণিমার তিথি উর্দ্ধে চন্দ্র হাসে

শ্রী রাম ভরত ছাড়ি গেল বঙ্গ দেশে
।।
স্থুল দেহে তাঁরে কেহ আর দেখে নাই

অমর হইয়া আছে প্রকাশে ' সবাই
।।
সর্ব্ব আশ্রমের লোক রহে ওড়াকান্দী

মহানন্দ গেল না রে হয়ে মায়া বন্ধী
।।

 

হরিদাসপুরের কারবারী বাসা

 

আদর্শ গার্হস্থ্য নীতি পালে গুরুচাঁদ
পতিত গার্হস্থ্য ক্ষেত্র করিতে আবাদ
।।
বাল্য ও কৈশোরে করে বিদ্যা উপার্জ্জন

যৌবনে করিল দৃঢ় সংযম সাধন
।।
আজীবন ব্রহ্মচর্য রাখিলেন ঠিক্

চিরকাল পিতৃধর্ম্মে রাখিল নিরিখ
।।
প্রথম যৌবন কালে বিবাহ হইল

বিবাহ জীবনে প্রভু পবিত্র রহিল
।।
সংযমী সুধীর, শান্ত, অতি তেজোবন্ত

অতল সিন্ধুর প্রায় নাহি মিলে অন্ত
।।
গৃহী পক্ষে অর্থ হয় অতি মহাবল

অর্থ উপার্জ্জনে হ'ল বাসনা প্রবল
।।
নীলকান্ত,গীরিধর বন্ধু দুই জনা

তা 'দিগে খুলিয়া বলে মনের বাসনা
।।
তিনে মিশি হরিচাঁদে করে নিবেদন

তেঁহ আজ্ঞা দিল নৌকা গঠন কারণ
।।
নৌকা চালানীতে করে আরম্ভ বানিজ্য

কিছুকাল পরে করে সেই ভাব ত্যজ্য
।।
বাসিন্দা দোকান করি বন্দরের পরে

ব্যবসা করিতে প্রভু মনে ইচ্ছা করে
।।
পিতৃপদে সেই ইচ্ছা প্রকাশ করিল

ইচ্ছাময় মহাপ্রভু মতে মত দিল
।।
হেন কালে হরিচাঁদ লীলা সম্বরিল

কিছুকাল সে বাসনা স্থগিত রহিল
।।
দুই বর্ষ গত হ'ল বিভিন্ন প্রকারে

সংক্ষেপে বলিব তাহা গুরু কৃপা বরে
।।
নড়াইল বাসী নাম শ্রীনাথ সরকার

বন্দোবস্ত নিয়ে এল ওড়াকান্দী পর
।।
তাহে প্রতিবাদী হ'ল প্রজা সব জন

ভিন্ন জনে কর দিতে নাহি লয় মন
।।
দরবার করে সবে জমিদার ঠাঁই

খাস প্রজা সবে মোরা রহিবারে চাই
।।
জমিদার বলে তবে ভাবিয়া দেখিব

শ্রীনাথে ডাকিয়া সব খুলিয়া বলিব
।।
কিছুকাল গত হয় দৈবে একদিন

দখল লইতে আসে শ্রীনাথ প্রবীণ
।।
প্রজা বুঝে জমিদার বঞ্চনা করিল

'লে ক'য়ে শ্রীনাথেরে দেশে পাঠাইল
।।
প্রজা বলে “শুন তুমি সরকার বাবু

তুমি বলবান মোরা সবে দেখ কাবু
।।
তব সাথে বিবাদ মোরা কভু না করিব

জমিদার বাড়ী চল সেথা সব ক'
।।
যদি জমিদার বলে দিতে তোমা কর

আপত্তি রবে না কিছু তোমার উপর
।।
শ্রীনাথ ভাবিল মনে কথা মন্দ নয়

আপোষেতে যদি কার্য সুসমাধা হয়
।।
তবে কেন গোলমাল করি আমি মিছে

মিট্ যদি নাহি হয় দেখা যাবে পিছে
।।

 

এত ভাবি দিল সায় সেই যে শ্রীনাথ
কথা হ'ল প্রজা সবে যাবে তাঁর সাথ
।।
দিন স্থির করি সবে গৃহেতে আসিল

স্বদেশে শ্রীনাথ তবে প্রস্থান করিল
।।
একে'ত কায়স্থ জাতি তাহে সরকার

চতুরতা কার্যে বুদ্ধি অতিব প্রখর
।।
মনে ভাবে জমিদার বড়ই দয়াল

তাঁর কাছে গেলে সব হবে পয়মাল
।।
অশিক্ষিত নমঃশূদ্র তাহাতে দরিদ্র

আমরা কায়স্থ জাতি ধনে, মানে ভদ্র
।।
আইনের কুটীনাটী সব মোরা জানি

আইনের চাপে সব জব্দ ক'রে আনি
।।
এত ভাবি কূটবুদ্ধি সেই মহাশয়

মহাকুমা পানে চলে প্রফুল্ল হৃদয়
।।
ফৌজদারি আদালতে করিল বর্ণনা

নমঃশূদ্র প্রজা মোরে দখল দিল না
।।
অত্যাচার বহুতর করিয়াছে মোরে

থালা,বাটী খাতাপত্র নি'ছে জোর করে
।।
বড়ই দুর্দান্ত তারা আইন না মানে

খুন করা “ছাড়া তারা কিছুই না জানে
।।
অল্প রাত্রি ছিল আমি পায়খানা যাই

হেন কালে দল জুটে এসেছে সবাই
।।
দ্বার খোলা ছিল ঘরে আলো ছিল জ্বালা

খাতা পত্র সাথে নিল, ঘটী, বাটী, থালা
।।
সোরাগোল শুনি আমি আসি গৃহ দ্বারে

দশ জনে বর্শা নিয়ে মোরে তাড়া করে
।।
প্রাণ ভয়ে আমি ছুটি ফেলে দিয়ে ঘড়া

বস্ত্র ছিড়ে গেছে পড়ে চাবি দুই তোড়া
।।
অতি কষ্টে প্রাণ নিয়ে আমি আসিয়াছি

পুনরায় গেলে সেথা বাঁচি কিনা বাঁচি
।।
দুষ্টজনে ছল হয় প্রধান সহায়

যাত্রাকালে গৃহ হতে ছিন্ন বস্ত্র লয়
।।
সেই ছিন্ন বস্ত্র তুলি হাকিমে দেখায়

হাকিম” সনাক্ত “ বলি তাহা লিখি লয়
।।
প্রধান আসামী নাম শ্রীগুরুচরণ

বিশ্বাস উপাধি বলে” ঠাকুর” এখন
।।
শ্রী বিধু ভূষণ নামে দ্বিতীয় আসামী

উপাধী চৌধুরী কহে শুনিয়াছি আমি
।।
এই ভাবে ওড়াকান্দী যতেক প্রধান

শ্রীনাথ করিল নাম হয়ে হতজ্ঞান
।।
হাকিম জিজ্ঞাসা করে মোক্তারের ঠাঁই

শুনুন মোক্তার বাবু আমি জানতে চাই
।।
দূর্দান্ত আসামী বলি হয়েছে বর্ণনা

আসামীর নামে কিন্তু সে ভাব আসে না
।।
প্রধান আসামী বলি হয়েছে যে নাম

ঠাকুর “উপাধি তাঁর আমি জানিলাম
।।
ঠাকুর বলিয়া যার উপাধি হয়েছে

সেই ব্যক্তি হেন কর্ম্ম কভু কি ক'রেছে
।।
আপনি মোক্তার বাবু এই দেশে ঘর

খুলিয়া বলুন দেখি সব সমাচার
।।
কি কারণে এই ব্যক্তির উপাধি ঠাকুর

সত্য কথা বলি মোর সন্দ কর দূর “
।।
বিনয়ে মোক্তার বলে “জানাই হুজুর
 
এই ব্যক্তির পিতা ছিল “শ্রী হরি ঠাকুর “
।।
মহাসাধু সেই ব্যক্তি ছিল এই দেশে

রোগী, ভোগী পে'ত শান্তি তাঁর কাছে এসে
।।
অলৌকিক শক্তি তাঁর আছিল প্রচুর

তাঁহাকে ডাকিত সবে শ্রী হরি ঠাকুর
।।
তাঁর পুত্র হ'ন ইনি মহা ধনবান
 
দেশ বাসী সবে তাঁরে করয় সন্মান
।।
পিতৃতুল্য দৈবশক্তি আছে কিনা আছে

সে সব জানিনা মোরা জানে যারা কাছে
।।
সাধুর সন্তান তাহে সম্মান প্রচুর

সেই জন্যে উপাধীতে হয়েছে ঠাকুর
।।

 

কথা শুনি বিচারক হাসি হাসি বলে
'বড়ই সুন্দর ব্যাখ্যা এখানে করিলে
।।
পিতা যার দেবতুল্য নিজে ভাগ্যবান

এসব কর্ম্মের নাকি সে রাখে সন্ধান?
যা ' হক্ তা ' হক্ বাবু! কর্ত্তব্য আমার

অভিযোগ পেলে করি বিচার তাহার
।।
মনের সন্দেহ কিন্তু দূর নাহি হয়

মামলা তদন্ত হোক এই দিনু রায়”
।।
পুলিশের হাতে দিল তদন্ত কারণ

রায় শুনি শ্রী নাথের মলিন বদন
।।
স্থানীয় সাক্ষী তা 'তে প্রয়োজন ভারী

শ্রী নাথ বসিয়া ভাবে উপায় কি করি
।।
ইচ্ছা ছিল “ তলবেতে “ কাঠ গড়া এনে

করিব বিষম জব্দ শহরেতে টেনে

সে আশা নির্ম্মূল হল উপায় না দেখি

হাতে নাতে ধরা পরে হতে হল মেকী
।।
কিছুদিন পরে যবে তদন্তে আসিল

শ্রীনাথ ঘটনাস্থলে কভু নাহি গেল
।।
তদন্তে দারোগা জানে সব জুয়াচুরি

রিপোর্ট লিখিয়া দিল “ফরেদি ফেরারী
।।
নিষ্কলঙ্ক চন্দ্রসম আসামী খালাস

শ্রীনাথ গেল না আর ওড়াকান্দী পাশ
।।
এইভাবে মোকদ্দমা চূড়ান্ত হইল

ভয়াকুল প্রজাকুল আনন্দ পাইল
।।
বার'শ পঁচাশি সাল অঘ্রাণ মাসেতে

শতটাকা ট্যাক্স ধার্য প্রভুর পরেতে
।।
পরশ্রী কাতর যত দুষ্ট দূরাশয়

রাজ সরকারে গিয়া বহু কথা কয়
।।
শ্রী হরির পুত্র নাম শ্রী গুরুচরণ

গাড়ী গাড়ী টাকা পায় তাহার কারণ
।।
ব্যবসা বানিজ্য তিনি করে বহুতর

সরকারে কভু নাহি নাহি দেয় কর
।।
গুরুভার ট্যাক্স তার উচিত যে হয়

এই সব কূটকথা সরকারে জানায়
।।
ট্যাক্স ধার্য করিলেন রাজ কর্ম্মচারী

নোটিশে জানায় কথা ঠাকুরের বাড়ী
।।
ঘটনা জানিতে প্রভু হইলেন ব্যস্ত

ট্যাক্সের বিরুদ্ধে দিল এক দরখাস্ত
।।
বর্ণনা করিল প্রভু তাহার মধ্যেতে

এই ট্যাক্স দিতে মোর না হবে সাধ্যেতে
।।
বিশেষতঃ এই কথা করি নিবেদন

মম পিতা ছিল বটে সাধু মহাজন
।।
তেঁহ অগ্রে রোগী ভোগী দিতে কত অর্থ

সেই সবে নাহি মোর কিছু মাত্র স্বার্থ
।।
ধর্ম্মজ্ঞানে যেই অর্থ সাধুজনে দেয়

তদুপরি ট্যাক্স ধার্য উচিত না হয়
।।
মহামান্যা মহারাণী করেছে ঘোষণা

ধর্ম্ম কার্যে হস্তক্ষেপ রাজা করিবে না
।।
ধর্ম্মের ব্যাপারে আমি সেই অর্থ পাই

তার পরে ট্যাক্স ধার্য 'রাজাইনে' নাই
।।
যুক্তি পূর্ণ দরখাস্ত করে গুরুচাঁদ

রাজ কর্ম্মচারী তাতে ট্যাক্স দেয় বাদ”
।।
ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করে উকিলের ঠাঁই

শুন হে উকিল বাবু আমি জানতে চাই
।।
কি কারণে অর্থ সবে দেয় এই জনে

শুধু শুধু অর্থ দিবে কিসের কারণে ?
আমি রাজ কর্ম্মচারী রাজশক্তি বলে

বিচার করেছি কত অতি কুতূহলে
।।
রাজদণ্ড ভয়ে দেখ সবে করে ভয়

শুধু শুধু তবু অর্থ কেহ নাহি দেয়
।।
কোন শক্তি বলে বল এই ভাগ্যবান

গৃহে বসি অর্থ পায় না করি সন্ধান
।।
উকিল হাকিমে বলে বিনয় বচনে

যে আজ্ঞা হুজুর সব বলিব এখনে
।।

 

ইহার পিতার নাম শ্রী হরি ঠাকুর
এই জিলা মধ্যে বাস সাধনা প্রচুর
।।
ওড়াকান্দী গ্রামে তিনি করিলেন বাস

শত শত নর নারী যেত তাঁর পাশ
।। 
অলৌকিক শক্তি বলে সেই মহাশয়

রোগারোগ্য করিতেন মুখের কথায়
।।
অন্ধজনে দৃষ্টি পে'ত দরিদ্রেতে ধন

সবে পেত যেই যাহা করিত মনন
।।
মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হত যখনি যাহার

ইচ্ছামত দিত সবে অর্থ কি আহার
।।
তাঁর বাড়ী সবে মানে তীর্থক্ষেত্র প্রায়

অদ্যাবধি অর্থ আনি সবে সেথা দেয়
।।
সেই অর্থ তাঁর পুত্র শ্রী গুরুচরণ

পিতার নামেতে তাহা করেন গ্রহণ
।।
এই ব্যক্তি সেই শক্তি ধরে কিনা ধরে

সেই কথা বলি তবে যা আসে অন্তরে
।।
কিছু শক্তি এই জন নাহি যদি পায়

সবে কেন আসে তবে তাঁহার আলয়
।।
মোরা সবে আছি হেথা বসিয়া শহরে

সব কথা নাহি জানি বলি কি প্রকারে
।।
তবে এক কথা মনে ওঠে যে হুজুর

ব্রহ্ম শক্তি যাঁর আছে সে হয় ঠাকুর
।।
যার আছে তাঁর কাছে ছুটে যে সকলি

মধু শূন্য পুষ্পে কভু ধায় নাকি অলি
স্বনামে পুরুষ ধন্য উত্তম সে জন

পিতৃধনে ধনী ভবে আছে কত জন
।।
যে বাড়ায় তার হয় অগণিত ধন

মূলধন ক্ষয় করি দীন কতজন
।।
এ মহাপুরুষে জানি বহু বিত্তশালী

দিন দিন বাড়িতেছে সে ধন সকলি
।।
ইথে মম মনে লয় এই মহাজন

শুধু ধনে নয় ইনি গুণে মহাজন
।।
ধর্ম্ম পথ জানি সুক্ষ্ম নাহি কুটুম্বিতা

ধনধান্য লক্ষ্মী থাকে ধর্ম্ম থাকে যেথা
।।
নিশ্চয় জানিনু তা'তে ধার্ম্মিক এ জন

শুধু পিতৃধনে নহে নিজে মহাজন
।। 
কথাশুনি বলে সেই রাজ - কর্ম্মচারী

শুনহে উকিল বাবু নিবেদন করি
।।
যেই জন ধর্ম্ম রাখে ধর্ম্ম রাখে তারে

পরম ধার্ম্মিক ইনি বুঝিনু অন্তরে
।।
ধর্ম্মপথে যেই ধন পায় মহাশয়

তদুপরি ট্যাক্স ধার্য উচিত না হয়
।।
তবু এক কথা আমি বলিবারে চাই

উচিৎ কি অনুচিত বুঝুন মশাই
।।
রাজদ্বারে পরিচিত নহে যেই জন

বৃথা তার জমিদারী যশ মান ধন
।।
শুনিয়াছি ইনি সদা করিছে বানিজ্য

বানিজ্যের ধনে ট্যাক্স দে'য়া কিন্তু ন্যায্য
।।
এসব বিচার ইনি করুন আপনে

ইচ্ছা হলে ট্যাক্স দিন রাজ সন্নিধানে
।।
হাকিমের কথা শুনি গুরুচাঁদ হাসে

হাসি কন্ “মোর মনে এই ভাব আসে
।।
বানিজ্য করিয়া আমি যেই অর্থ পাই

তার কিছু অংশ আমি ট্যাক্স দিতে চাই
।।
রাজার আশ্রয়ে প্রজা রহে চিরসুখে

রাজার সাহায্যে টাকা দে'য়া ভাল ঠেকে
।।
বিশেষতঃ রাজদ্বারে এই অর্থ দিলে

রাজ - পরিচিত হব আমরা সকলে
।।
আর কথা গুরুচাঁদ ভাবে মনে মন

নমঃশূদ্র ঘরে ধনী নাহি কোন জন
।।
অন্য অন্য জাতি যত আছে বঙ্গ দেশে

ধন জন মান আছে দেশে কি বিদেশে
।।
রাজঘরে পরিচিত বিদ্যা বুদ্ধি ধনে

উচ্চ জাতি বলি রাজা সে সকলে জানে
।।

 

ধনহীন নমঃশূদ্র আছে পরিচয়
এই ঘরে 'আয়কর কেহ নাহি দেয়
।।
যে জাতির ঘরে ধন নাহি পরিমিত

দরিদ্র বলিয়া তারা বিশ্বে পরিচিত
।।
দরিদ্রের মান নাই সবে কৃপা করে

ভিক্ষুকের প্রায় ঘুরে দুয়ারে দুয়ারে
।।
আমি অদ্য রাজদ্বারে যদি ট্যাক্স দেই

কে বলিবে নমঃশূদ্র ঘরে ধনী নেই
।।
জাতির কারণে মোর ট্যাক্স দেয়া ভাল

ট্যাক্স দিলে একদিনে পা'ব তার ফল
।।
এত ভাবি সবিনয়ে গুরুচাঁদ কয়

হুজুর আমার এই নিবেদন হয়
।।
বানিজ্য করিয়া আমি যত অর্থ পাই

তদুপরি কুড়ি টাকা ট্যাক্স দিতে চাই
।।
শ্রীগুরুর বাক্য শুনি হাকিম বিস্মিত

বলে “আমি তব ঠাঁই হই পরাজিত
।।
স্বেচ্ছায় রাজাকে দান কেহ নাহি করে

শ্রেষ্ঠ রাজভক্ত আমি দেখি আপনারে
।।
রাজ - প্রতিনিধি কাছে দিব সব লিখি

দেখি আপনার কিছু কর্ত্তে পারে নাকি ?
বহুত প্রশংসা করে সেই সে হেকিম

পরবর্ত্তী কথা শুন, অথ ততঃ কিম্
।।
অগ্রভাগে সে হাকিম সেলাম জানায়

টাকা দিয়া মহাপ্রভু ঘরে ফিরে যায়
।।
গৃহে আসি গুরুচাঁদ ভাবে মনে মন

এ জাতির ঘরে বৃদ্ধি - করা চাই ধন
।।
কিছু কিছু ব্যবসায় আমি করিয়াছি
 
তাহাতে ধনের বৃদ্ধি ঠিক বুঝিয়াছি
।।
মম পিতা হরিচাঁদ লীলা সাঙ্গ কালে

এ জাতি উঠাতে আজ্ঞা করে কুতূহলে
।।
তাঁর ইচ্ছা তাঁর কর্ম্ম করিবেন তিনি

আমি তো নিমিত্ত মাত্র কিছু নাহি জানি
।।
তাঁর আশির্বাদ আছে আমার উপরে

করিব সে সব কর্ম্ম যা ' উঠে অন্তরে
।।
যন্ত্রী তিনি যন্ত্র আমি তিনি বাদ্য করে

সেই ভাবে গান গায় যে ভাব অন্তরে
।। 
এ জাতির মধ্যে আমি যে কর্ম্ম করিব

পৃথিবীর জীব দ্বারা সে কর্ম্ম সাধিব
।।
বারশ ছিয়াশি সালে জ্যৈষ্ঠের প্রথমে

কুড়ি টাকা ট্যাক্স ধার্য শ্রী গুরুর নামে
।।
আষাঢ় মাসের শেষে হরিদাস পুরে

দোকান খুলিল প্রভু বাসা ঘর করে
।।
বেথুরিয়া গ্রাম বাসী নাম যজ্ঞেশ্বর

ধীর স্থির প্রাজ্ঞ তিনি স্বভাব সুন্দর
।।
বিশ্বাস উপাধী ধারী জ্ঞানেতে প্রবীণ

গুরুচাঁদে ভক্তি তিনি করে চিরদিন
।। 
রামতনু নামধারী অপর সুজন

গোমস্তা সাজিয়া পেল প্রভুর চরণ
।।
হরিদাসপুরে রয় দুই মহাশয়

কর্ম্মচারী রাখি সেথা ব্যবসা চালায়
।।
গুণে জ্ঞানে দুই জনে কেহ নহে হীন

উভয়ের শ্রম লাভ বাড়ে দিনে দিন
।।
এক দরে বেচা কেনা একই ওজন

জুয়াচুরি বাটপাড়ী চলে না কখন
।।
সকলে জানিল তবে এই শুভ বার্ত্তা

হরি - পুত্র গুরুচাঁদ দোকানের কর্ত্তা
।।
দলে দলে সে দোকানে ভিড়িল সবাই

ইচ্ছামত কেনে দ্রব্য কোন ভয় নাই
।।
ক্রমে ক্রমে ব্যবসায় অতি বড় হ'

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ “আপনি ফলিল
।।
সবে বলে “সাচ্চা মাল কর্ত্তার দোকানে

ঠকিবার ভয় নাই যেই যাহা কিনে”
।।
যেই দ্রব্য যেই জনে দোকানেতে চায়

সর্ব্ববিধ দ্রব্য এক দোকানেতে পায়
।।

 


ক্ষীরোদ বিহারী হরি “ পিতা রূপে যাঁর

শান্তি দেবী রূপে “লক্ষ্মী “ জননী যাঁহার
।।
ব্যবসা দূরের কথা যেই কর্ম্ম করে

সিদ্ধি নিয়ে শ্রী গণেশ সাথে সাথে ফিরে
।।
আষাঢ় মাসেতে ঘরে দোকান বসিল

দুই মাস মধ্যে ধন বহুৎ বাড়িল
।।
বহুত বাড়িল ধন ব্যবসা কারণে

লগ্নি কার্য লাগি বাঞ্ছা করিলেন মনে
।।
সেই কথা ক্রমে ক্রমে করিব প্রচার

এ পর্যন্ত করি ক্ষান্ত বাণিজ্য প্রকার
।।
গুরুচাঁদ রূপে এল ভবারাধ্য ধন

মহানন্দ না চিনিল অন্ধ যে নয়ন
।।

 

লগ্নী কারবার

 

অর্থে জান ' মহাশক্তি লক্ষ্মীর বাহন
যথা লক্ষ্মী তাঁর সাথে আছে নারায়ণ “
।।
অবিরত গুরুচাঁদ এই বাণী কয়

জনে জনে সর্ব্বক্ষণে এ নীতি শিখায়
।।
অর্থ লাভে কোন কালে অলস না হবে

পেলে ধন হীন স্থানে কুড়ায়ে তা লবে
।।
পরম পবিত্র অর্থ লক্ষ্মীর আশ্রয়

সৎ পথে সেই ধন লইবে সদায়
।।
যথা তথা হতে ধন আন নিজ ঘরে

সাধু - শ্রমে আন তারে বিবিধ প্রকারে
।।
এমন কি ধন যদি হীন স্থানে পাও

সাধু ভাবে এনে তাহা সংসার চালাও
।।
এই ধন চুরি করি কভু না আনিবে

চোরা ধন এলে ঘরে লক্ষ্মী দূরে যাবে
।।
লক্ষ্মী - ছাড়া ধন হয় মৃত্যুর কারণ

সেই ধন আন যাহা লক্ষ্মীর বাহন
।। 
সাধু ধন ভর করে লক্ষ্মী আসে ঘরে

সৎভাবে যদি তারে উপার্জ্জন করে
।।
অশুচি না হয় ধন পাত্রাপাত্র ভেদে
 
পবিত্রতা নষ্ট তার শুধু অপরাধে
।।
সৎ ভাবে যদি তারে তুমি তুলে লও

অর্থের সহিত ঘরে লক্ষ্মী মাতা পাও
।।
বাণিজ্য সাধুর কর্ম্ম মহাজনে কয়

মহাজন হলে তার মহামন হয়
।।
মহাজন সাজি করে দুষ্ট ব্যবসায়

ইহকাল পরকাল সব নষ্ট হয়
।।
ব্যবসায়ে লক্ষ্মী লাভ সত্য বটে কথা

তার মধ্যে রাখা চাই শুদ্ধ পবিত্রতা
।।
দীনে যদি চাহ ' ধন কর ব্যবসায়

ধন পাবে সৎ পথে থাকিলে নিশ্চয়
।।
ব্যবসায় কা'রে বলে শুনহে সকলে

শুধু দ্রব্য কেনা -বেচা নহে কোন কালে
।।
টাকা কড়ি লেন্ দেন্ যে যে ভাবে হয়

বিনিময় হলে অর্থ ব্যবসায় কয়
।।
লগ্নী কারবার তা'তে হয় ব্যবসায়

লগ্নী কারবারে প্রভু অর্থকে খাটায়
।।
ব্যবসায়ী লোক কত আসে প্রভুুর ঠাঁই

বলে “প্রভু কারবার লাগি অর্থ চাই
।।
আপনার টাকা প্রতি সুদ কিছু দিব

কারবার করি নিজে লাভবান হব
।।
ঘরে ঘরে সবে যাহে ব্যবসায়ী হয়

বাণিজ্য করিতে প্রভু তাই অর্থ দেয়
।।
প্রভুর আদর্শ ধরি তাই দেশবাসী

ব্যবসা করিয়া অর্থ পেল সবে বেশী
।।
দীন হীন কতজনে অর্থের অভাবে

করিত না কৃষি কর্ম্ম “পারিব না “ভেবে
।।
সে সবে ডাকিয়া প্রভু কহে কৃপা করি

অর্থ নিয়ে কৃষি কর অলসতা ছাড়ি
।।

 

 

কৃপাবাক্য শুনি তারা আনন্দ হৃদয়ে
কৃষি কার্য করে সবে টাকা কর্জ্জ ল'য়ে
।।
ফসলান্তে সবে আসি প্রভুর নিকটে

সুদসহ টাকা দেয় সবে নিষ্কপটে
।।
এ জগতে দেখি হায় মহাজন - নীতি!
দরিদ্র পিষিয়া তারা পায় মহা প্রীতি
।।
মহাজন পদতলে পড়িলে কাঙ্গাল

বাঁচা'ত দূরের কথা সব পয়মাল
।।
তাহার প্রমাণ লিখে বিশ্ব কবি 'রবি

'আঁকিয়াছে কাঙ্গালের ব্যথা-ভরা ছবি।।
দুই বিঘা জমি “নামে গল্পের আকারে

দেখা'য়েছে সেই চিত্র বিশ্বের মাঝারে
।।

এজগতে হায়, সেই বেশী চায়
যার আছে ভুরি ভুরি

রাজার হস্ত, করে সমস্ত
কাঙ্গালের ধন চুরি
।।
--- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কি আশ্চর্য দয়া ধৈর্য গুরুচাঁদে রয়
গুণাতীত - গুণমণি গুনের আলয়
।।
যেই অর্থ লয় আসি গুরুচাঁদ স্থানে

ব্যবসায় কৃষি কর্ম্ম যে কোন কারণে
।।
উভ লাভ হয় তা'তে নাহি লোকসান

সুদ পায় লাভ হয় দ্বিগুণ প্রমাণ
।।
ঠিক ভাবে নেয় অর্থ দেয় ঠিক ভাবে

তারে নাহি ধরে কভু অর্থের অভাবে
।।
আশ্চর্য গণিয়া তবে দেশবাসী বলে

'ধনপতি গুরুচাঁদ ' জন্মেছে এ কুলে
।।
এমন আশ্চর্য মোরা কভু দেখি নাই

নিয়া ধন দু'না দেই তবু দু'না পাই'
।।
'ত নহে লগ্নী-করা এযে ধন-দান

অসীম দয়ার গুণে করে গুরুচান
।।
গুরুচাঁদ হতে যেবা লয় মূলধন

অল্পদিনে সাজে সেই বড় মহাজন
।।
দেখে সবে মনে ভাবে আশ্চর্য তো ভারী

ধন লয়ে এল দেশে ধনের ভাণ্ডারী
।।
কিসে কিসে অর্থ বাড়ে শ্রী গুরু শিখায়

অর্থ-উপার্জ্জন-নীতি নমঃশূদ্রে পায়
।।
লগ্নী কারবারে বাড়ে বহুমতে ধন

জমি জমা বৃদ্ধি করে শ্রী গুরুচরণ
।।
কত দয়া - ভরা তাহা কি দিব তুলনা

ত্রিভুবনে হেন দয়া আর মিলিবে না
।।
খাতকের যে দুর্দ্দশা মহাজনে করে

'কসায়ের ব্যবহার ' বলে সর্ব্ব নরে
।।
আজি বটে গরীবের উদ্ধার কারণ

'খাতক আইন সৃষ্টি হয়েছে এখন
।।
যেই দিনে গুরুচাঁদ দরিদ্র পালিল

মহাজন যাহা করে সব জানি ভাল
।।
পাঁচ টাকা কর্জ্জ করি কত অভাজন
 
সুদের পাষাণ - তলে ছেড়েছে জীবন
।।
জমি গেছে জমা গেছে গেছে অস্থাবর

ঘর - হারা লক্ষ্মীছাড়া অবনী ভিতর
।।
নীলাম-খড়্গের ধারে ডিক্রি যুপকাষ্ঠে

কত দীন বলি হ'ল বাঁধা আষ্টেপৃষ্ঠে
।।
কিন্তু গুরুচাঁদ মোর দীনের বান্ধব
 
তাঁর পদাশ্রয়ে জীয়ে রহে দীন সব
।।
কর্জ্জ- কড়ি সুদ বাড়ি হয়েছে প্রবল

খাতকের জীর্ণ দেহ মনে নাই বল
।।
দিবা রাত্রি চিন্তা জ্বরে বলিছে প্রলাপ

ক্ষণে ক্ষণে অদৃষ্টেরে করে অভিশাপ
।।
ডিক্রি হবে জমি যাবে হবে গৃহ -হারা

দু'নয়নে বহে সদা শ্রাবণের ধারা
।।
কেন্দে কেন্দে বলে 'কোথা বিপদ-কাণ্ডারী!
দেনাদায় প্রাণ যায় উপায় কি করি ?

 

 

সেই জনে ডেকে বলে শ্রী গুরু দয়াল
ভয় নাই এ তুফানে ছাড়িস না হাল
।।
ডোবা তরী তুলে দিতে আসিয়াছি আমি

ঝড় দেখে ঝাপ দিতে যাস্ নারে থামি
।।
শ্রী হরি ঠাকুর মোর পিতা দয়াময়

আছে হরি রবে তরী নাহি ওরে ভয়
।।
তোর ভার মো'রে দেরে তুই হ'রে মোর

আমি নেবো তোরে ব'য়ে ভয় কিরে তোর
।।
দয়ালের বাণী শুনি দীন বলে কান্দি

দীনের বান্ধব মোর এল ওড়াকান্দী
।।
ঠাকুরের পদে করে দেনা - দরখাস্ত

দয়াময় গুরুচাঁদ করে বন্দোবস্ত
।।
জমি জমা গুরুচাঁদে করে সেই দান

দেনা শোধ করে গুরুচাঁদ ভগবান
।।
কবুলতি নিয়ে পুনঃ জমি ফিরে দেয়

এক বিঘা বিনা - করে খাস করি লয়
।।
ঋণ মুক্ত সে কাঙ্গাল প্রাণ ফিরে পায়

প্রজা সাজি বিক্রি হয় শ্রী গুরুর পায়
।।
এই মত শত শত ঋন - মুক্ত জন

শ্রী গুরু - কৃপাতে ধন্য হয়েছে এখন
।।
গৃহীজীবে বাঁচাইতে হরি অবতার

গুরুচাঁদে দিয়া গেল অসমাপ্ত ভার
।।
গৃহীকুল কুল পেল বাড়িল আনন্দ

অন্ধকারে বদ্ধ থেকে নষ্ট মহানন্দ
।।

 

শিক্ষা বিস্তারকল্পে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ

নহি জ্ঞানেন সদৃশ পবিত্রমিহ বিদ্যতে “
---গীতা
অনুন্নত - জাতি যত এ বঙ্গ মাঝারে

শিক্ষাশূন্য ছিল সবে ঘোর অন্ধকারে
।।
অশিক্ষার অন্ধকারে সবে মহা দুঃখী

মূঢ় জেনে দুষ্টগণে দেয় সবে ফাঁকি
।। 
জমিদার মহাজন সবে উত্তমর্ণ

কু - হিসেবে কষ্ট পায় যত অধমর্ণ
।।
কর দিতে জমিদার গৃহে কেহ যায়

সাতে পাঁচে কুড়ি বলি ত্রিশ টাকা লয়
।।
কেনা - খতে টিপসহি বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়া

ঋণ শোধ করে শেষে সম্পত্তি বেচিয়া
।।
অজানা এ অত্যাচার বুঝিতে না পারে

জানা - শোনা এ অত্যাচার করে ঘরে ঘরে
।।
কর দিতে দেরী হলে আর রক্ষা নাই

প্যাদা গিয়ে বাড়ি পরে করে 'তাগাদাই '
।।
ওরে দুষ্ট এত কষ্ট তোর তরে সই

এত হাটাহাটি করি খাজনাটা কই ?”
সর্ব্ব - হারা জান্তে - মরা প্রজা কেন্দে কয়

দয়া করে শোন কথা “প্যাদা মহাশয়
।।
ধান পাট কিছু কিছু পাইয়াছি বটে

বেচা কেনা করি নাই গিয়া কোন হাটে
।।
আগ হাটে বেচাকিনি সে সব করিব

সুদাসল সব টাকা শোধ ক'রে দিব
।।
কত দুঃখে দেখ তুমি কাল যে কাটাই

ঘরে চা 'ল চালে খর কিছু মাত্র নাই
।।
রোগ ভোগ আছে কত কেবা তাহা দেখে

অযন্তে মরেছে খোকা ভাঙ্গা ঘরে থেকে
।।
দয়া করে এই ধর তোমার নজর

সিকি খানা ছিল ঘরে শেষ কড়ি মোর
।।
হাকিয়া ডাকিয়া তবে বলিছে পেয়াদা

'সিকি নিয়ে সাধা সাধি আমি কিরে গাধা ?
দুই টাকা নজরানা পার যদি দিতে

আজিকার মতে তবে পারিব ছাড়িতে
।।'
অর্থ - হীন অন্ন -হীন বস্ত্র - হীন দীন
 
দুঃখ ভারে অসময়ে সেজেছে প্রাচীন
।।
'ক্ষমা করো' ' ক্ষমা করো' বলি পদ ধরে

ঘাড় ধরে প্যাদা তারে নেয় জোর করে
।।

 


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free