গান নং ৪১~৫০
গান নং- ৪১
আমার হরি এল, আমার গুরু এল
এল আমার মতুয়ার গণ
ঘরে ঘরে প্রেম বিলাল
পেল সবে অনর্পিত ধন।
দলিতের হিতের কারণ, জগতে করে অবতরণ
নামে করে পাষণ্ড দলন, জগতবাসীর মন কাড়িল।
স্বরূপ রূপের আলোর ছটায়, সবাই ওড়াকান্দি ধায়,
যে উঠিছে হরির নায়, ও তার বাঁধন ছুটিল।
যারা যায় নিশান হাতে, মুখে হরি হরি বলে,
কত জনমের আপন তারা, জড়িয়ে ধরে বলে ভাই।
দুজনের চরণধূলি, দুজনে মাথায় তুলি,
প্রেমেতে গলাগলি, হরি বলে দুজনে ছাড়ে হাই।
দুঃখীর দুঃখ দেখে চোখে, তুলে নেয় আপন বক্ষে,
দুঃখ ভাগী দুজন তারা, ভাসে সুখ প্রেমার্ণবে।
গুরুচাঁদ রক্ষা কর্তা, ডেকে সবে দিল বার্তা,
দুঃখ নিবারণ, হরিচরণ, পিছে র’ল বৃন্দাবন।
গান নং- ৪২
হরিচাঁদ প্রেম মহাজন, করে যতন
বিকায়েছে প্রেম রতন
যত প্রেমিক জনা, বেচাকেনা
করছে মনের মতন।
গুরুচাঁদ পাটে বসে, ধরছে কসে, কারো ছাড়াছাড়ি নাই
প্রেম দিতেছে অকাতরে, সবার তরে, ভেদ বিচার নাই
হরিবোল বলে মুখে, যে দাঁড়ায়ে সম্মুখে
তারে গলে ধরে কোলাকুলি, সবাই আপন ভাইয়ের মতন।
তারক করে ব্যাখ্যা, প্রেমিক রতন, পেল আখ্যা
অশ্বিনীর গানের কথা, মনের ব্যাথা, যায় না দেখা
যে জন হরিনাম গায়, সে জন আমার ভাই
বৃন্দাবনের এই আকিঞ্চন
ভাইয়ের মত ভাই পেলে ধরি তার রাঙা চরণ।
গান নং- ৪৩
ওলো সই,
তোরা কেমন করে প্রাণ রেখেছিস
মন ভুলেছে বাঁশীর সুরে, প্রাণ ভুলিল কই।
আমি ডাকি তার নাম ধরে
সে যে বাঁশী বাঁজায়, আমার নামের সুরে সুরে
তার ডাক শুনে তাই ছুটে এলাম
তারে পেলাম কই, সখী তারে পেলাম কই।
নাম দিয়ে সে জগত মাতাল
অনর্পিত নাম দিয়ে সকলের ঘুম ভাঙ্গাল
সবাই জাগে তারই ডাকে
আমি দূরে দূরে রই, সখী আমি দূরে রই।
বেঁচে থাকার সাধ গিয়েছে
মন গিয়েছে তার পাশে প্রাণটা তবু বসে আছে
আমার মরণ হলে ভাল
শেষের দিনে যেন তারই পাশে পাশে রই।
সখী, তারে দেখিস যদি এবার
জানাস তারে আমার প্রাণের আহাকার
বৃন্দাবনের এই নিবেদন
শান্তি-হরির যুগলরূপ নয়ন পটে বেঁধে লই।
গান নং- ৪৪
ও নদীরে, তোর ভাঙন চরে বাঁধলাম আমার ঘর
তুই আপন করতে কাছে আসিস, করে যাস পর।
তোর শীতল পরশ পাব বলে ভাঙন চরে রই
ঘর ভাঙ্গিয়া গেলিরে তুই, পরশ পেলাম কই
আমি তবু তোরই আশাতে রই
আসিস যদি পেলে বন্ধু কোন অবসর।
তোর বানের জলের ঢেউ লাগিয়া, ভাঙ্গে আমার বাসা
ঢেউয়ের সাথে দুলে ওঠে, আমার স্বপ্ন পূরণ আশা
আমার মূক কণ্ঠে জাগায় ভাষা
কুল ছাপিয়ে ওঠে নেচে, বৃন্দাবনের হৃদ সরবর।
গান নং- ৪৫
তোমার অসীমে তোমার চরণ ধ্বনি
(আমি) আজি শুনি
তোমাতে আমায় করিয়া বিলীন
(আমি) তোমার বাণী শুনি।
কার জমিতে করি দখলদারী
আমি কার হুকুমে করি জমিদারী
আমার শূন্য থলি শূন্য থাকে
মিছেই প্রমাদ গুনি।
নিজেরে করিনু ভিখারি
দ্বারে দ্বারে নিত্য ঘুরি
দয়া করুণা ভিক্ষা মাগি
হৃদয় গভীরে শুনি কান্নার ধ্বনি।
তোমার অসীম আকাশে
কত তারা-শশী হাসে
একটি খসে গেলে কি ক্ষতি তোমার
তবু তারে রেখেছ ধরি
পরম আদর করি
যেন অপরিমেয় স্নেহের আধার
তোমার লাগি তাই আজি
কাঁদে নিখিল ধরণী।
গান নং- ৪৬
হরি কি প্রেম দিলে গো নকিমে!
বসিল কৃষ্ণ হৃদাসনে নকিম রাখিল যতনে।
(নকিমের বাবা)
হাতে বুনিছে তাত মুখেতে কৃষ্ণ নাম
আরোপে কৃষ্ণধ্যান ছবি
মনে মনে গেথে হার কণ্ঠেতে পরাল তাঁর
জাগিল হৃদয় রবি
চুড়ায় ঠেকিয়া হার গলে নাহি গেল
নকিম জানিল তাহা মনে।
(নকিম)
নকিম দেখিয়া তাই বাবা বাবা বলে ডাকে
হাত কিছু কর উঁচু মালা নহেত চুড়ায় ঠেকে
কৃষ্ণ গলে মালাখানি হেরিব দুনয়নে।
গান নং -৪৭
এমন করে কে সাজাল হরিরে
অগুরু চন্দন ঘ্রানে নবপুষ্প হারে
মন হরে নিল রে।
(জানকী)
ফুল হেরি দুনয়নে শ্রীহরিরে পড়ে মনে
ভাবে আজ যদি আসিত হরি
এই নব পুষ্পগুলি শ্রীচরণে দিতাম তুলি
গলেতে পরাতাম মালা করি
আজ যদি আসিত হরি।
কপালে দিতাম কেটে অগুরু চন্দন ফোঁটা
এই সাজে দেখিতাম হরিরে
আমার হরিরে।
আরোপে ফুল তুলে চন্দন মেখে মেখে
শ্রীচরণে দিল অঞ্জলি
আরো পুষ্পে গেথে হার গলেতে দিল তুলি
অপরূপ মন হররূপ সাজে
সাজাল হরিরে।
(ওড়াকান্দি)
ভক্তবৃন্দ বলে, এমন সুবাস কোথা হতে এল
শ্রীহরি বলে, মল্লকান্দির জানকী আমারে সাজাল
এমন সুবাস কোথা হতে এল।
জানকীর ডাকে ওড়াকান্দি থেকে
সত্তরে শ্রীহরি মল্লকান্দি এল
এমন সুবাস কোথা হতে এল।
উঠে আরোপ হতে হৃষ্ট চিত্তে
শ্রীহরিকে পূজিল
জানকী পূজিল রে
করজোড়ে প্রণতি করিল রে
হরিরে প্রণতি করিল রে।
গান নং- ৪৮
আমরা ভোলার চেলা, হরিবোলা
নাচি রেখে দিল খোলা।
আমরা হরিবোলা, আমরা হরিবোলা।
নেংটি পরে নিশান ধরে, লাফাই যেন পাগ্রল প্রায়
হরিনামের ধ্বনি তুলে, আকাশ বাতাস দেই কাঁপায়
শুনে ডঙ্কা কাঁসি শঙ্খ ধ্বনি, হয়ে যাই আত্মভোলা।
হরিরূপে হয়ে উন্মুখ, ওড়াকান্দি করে মুখ, ধূলায় করি গড়াগড়ি
আমরা ভুলে শৌচাশুচি, আপন পর, করি সবাই জড়াজড়ি
নিয়ে ভক্তগণের চরণ ধূলি, চলি সত্য সাধন পথে চলা।
নিশান তত্ত্ব করি ব্যক্ত, সত্য যুগের কথা
মালি-কোকিলিনীর কথা, তাদের মনের ব্যাথা
হয়ে মহাপাপী, দুঃখী তাপী, নিশান নিয়ে করে সাধন
হয়ে মুক্ত ভক্তিযুক্ত রাজকুলে করে জনম গ্রহণ
কলির জীব হতে মুক্ত, সেই নিশান নিয়ে হয়ে মত্ত
গুরুচাঁদ জেনে তত্ত্ব, দিল মন্ত্র সত্য পথে চলা।
অকামনা প্রেমের প্রেমিক মতুয়া গোঁসাই
কোথা হতে পেল প্রেম, আমার গুরুচাঁদ সাই।
সে যে দ্বাপর যুগের রাস, রাধা-কৃষ্ণ গোপীসনে আসে
আমার ভোলা বাবা, হয়ে ভোলা গমন করে রাসে।
নিস্কাম প্রেমের পুরী, হয়ে প্রেমের অনুসারী
হয়ে আত্মভোলা, রাসে দেয় গড়াগড়ি।
সেই প্রেমের রস, দিতে ভক্ত সমাজে
গুরুচাঁদ রূপে ভোলা মত্ত হল কাজে।
দিল সেই প্রেমের ধারা, ভক্তগণ মাতোয়ারা
বৃন্দাবনের নয়ন ঝরে, যায় না শুধু মনের গোলা।
গান নং- ৪৯
গোলেমালে চলে গেলে তোর জীবন রবির বেলা
ওরে, কি ভেবে তুই বসে র'লি নিয়ে ধুলাখেলা।
নিয়ে সংসারের বোঝা, পেলি কি এমন মজা,
পরমাত্ম বন্ধুর খোঁজা, কেন করিস হেলাফেলা।
পিতৃধন মাথায় করে, ঋণী হলেম জগত পরে,
সেই ঋণ শোধিবারে, শুধু করলি অবহেলা।
বাবা মায়ে জন্ম দিল, তাতে কি তোর ঋণ হল,
তোর বাপেরে কে জন্ম দিল, ভেবে দেখ এই বেলা।
ডেকে এনে সন্তানে, ঋণী করে গেলি কেনে,
এই ঋণ কোন বিধানে, ভাবছ কিরে ও মন ভোলা।
জীবের জীবন চক্রাকারে, ঘুরে ফিরে বারে বারে,
কি ধনে কে ঋণি করে, বৃন্দাবনের যায় না গোলা।
গান নং- ৫০
মন চল যাই শ্রীধাম ওড়াকান্দি,
ল'য়ে ভক্তের চরণ ধুলি নয়ন জলে কান্দি কান্দি।
উঠেছে প্রেমের বন্যা ভাব সাগরে ঢেউ,
যে যাবিরে ওড়াকান্দি বঞ্চিত হবি না কেউ,
জোয়ার জলের স্রোত ধরি নেরে তোর তরী বাঁধি।
হরিচাঁদের প্রেমের তরী গুরুচাঁদ হাল ধরেছে,
মহানন্দ, তারক, লোচন সেই তরীতে উঠেছে,
ওরে যে উঠেছে সেই তরীতে তার কেটে গেছে মনের আন্ধি।
বৃন্দাবনের কপাল মন্দ,
যায় না তার চিত্ত সন্দ,
বিষয় মোহে আছে অন্ধ, কোন প্রেমেতে তারে বাঁধি।