মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

পৃষ্ঠাঃ ২২১-২৪০

পুলিশ সংবাদ লিখে জানায় উপরে
তদন্তে পাঠায় লাট কমিশনাররে
।।
উচ্চ কৰ্মচারী যত কায়স্থ ব্রাহ্মণ

মনে করে নমঃশূদ্রে করিব দমন
।।
পিটুনী পুলিশসেথা বসাইতে চায়

সংবাদ শুনিয়া সবে পেল মহা ভয়
।।
বিপদে বান্ধব কেবা গুরুচাঁদ বিনে ?
সবে মিলে উপস্থিত শ্ৰীগুরু সদনে
।।
বলে কৰ্ত্তা! শুন বাৰ্ত্তা করি নিবেদন

এইবারে যাবে মারা নমঃশূদ্রগণ
।।
পিটুনী পুলিশশুনি অতি ভয়ঙ্কর

তার হাতে কোনজনে পাবেনা উদ্ধার
।।
রাজ-সরকারে এই গেছে সমাচার

নমঃশূদ্র দাঙ্গাবাজ করে অত্যাচার
।।
তুমি বিনে এ বিপদে বন্ধু কেহ নাই

রক্ষা কর গুরুচাঁদ চরণে দোহাই
।।
প্রভু বলে রক্ষা করি কিসের কারণে ?
বাঁচিয়া থাকিয়া কিবা করিবে জীবনে ?
তোমাদের ব্যবহার সব আমি জানি

কাঁদাকাটি যাহা কর কিছু নাহি মানি
।।
কিবা কাজ হবে তোরা বাঁচিয়া থাকিলে

কিবা কাজ করেছিস তোরা এতকালে
।।
শয়ন ভোজন আর পুত্রকন্যা-জন্ম

তোদের জীবনে মাত্র দেখি এই ধৰ্ম
।।
না মানিলি গুরুবিষ্ণু না হলি বিদ্বান

তোদের জীবনে বাপু! কেন এত টান
।।
ইতর পশুরা আছে বেঁচে যেই ভাবে

তোরাও তাদের মত কাজে কি স্বভাবে
।।
এমন জীবনে বল বেঁচে কিবা ফল?
আকারে মানুষ বটে পশু একদল
।।
_____________________
* Punitive Police

আমি বাপু বাঁচাবাঁচি কিছু নাহি বুঝি
যার যার বাড়ী চলে যাও সোজাসুজি
।।
তিরস্কার করে প্রভু যত তাঁর মন

অধোমুখে শুনে বসে নমঃশদ্রগণ
।।
প্রভুর উদ্দেশ্য বুঝে হেন কেহ নাই

চুপ করে অধোমুখে বসে থাকে তাই
।।
কতক্ষণ তিরস্কার প্রভুজী করিল

কিন্তু তবু স্থান ছেড়ে কেহ না নড়িল
।।
বারে বারে তিরস্কার করি কতক্ষণ

পুনরায় রেগে বলে শ্রীহরি-নন্দন
।।
কিবা কই কারে কই কেবা বোঝে কথা

এমন বিষম দায়ে ঠেকায়েছে পিতা
।।
বোকা জাত দিবা রাত করে অপকৰ্ম

জ্ঞান কাণ্ড কিছু নাই কিসে পাবে ধৰ্ম ?
আজ বুঝি কেন বাবা বলেছিল মোরে

বড়ই ঠকেছি আমি এসে এই ঘরে
।।
এই ভাবে রাগারগি করে দয়াময়

কেবা বোঝো কোনভাবে কোন কথা কয়
।।
আপন সন্তান যদি কভু কৰ্ম দোষে

বিপদে পড়িয়া পরে নিজ গৃহে আসে
।।
তার দরশনে পিতা যেই ভাব করে

কখন গৰ্জ্জনে কাটেকভু তিরস্কারে
।।
সন্তানের বিপদেতে চিত্ত নহে স্থির

সৰ্ব্বদায় করে যথা ভিতর বাহির
।।
কি করি কি করিমনে সদা এই ভাব

গুরুচাঁদে দেখা গেল তেমনি স্বভাব
।।
জ্ঞানী যজ্ঞেশ্বর তাহা বুঝিতে পারিল

সাহসে করিয়া ভর সম্মুখে দাঁড়াল
।।
করজোড় করি বলে প্রভুর সদন

এক কথা কৰ্ত্তা আমি করি নিবেদন
।।
আপনার পিতা ছিলেন স্বয়ং শ্রীহরি

আপনার ভাব মোরা বুঝিতে কি পারি?

সত্যকথা এই ঘরে কোনই প্রকারে
শ্রীহরির মত রত্ন আসিতে না পারে
।।
হরি যে আসিল হেথা সে শুধু দয়ায়

নৈলে কি তেমন রত্ন নমঃশূদ্রে পায় ?
আপন গরজে হরি নিল এই ভার

ইচ্ছা ছিল নমঃশূদ্রে করিতে উদ্ধার
।।
সেই কার্যভার পরে দিয়ে আপনাকে

গিয়াছে দয়াল হরি আপনার লোকে
।।
নিজে সেধে ঋণী হল হরি দয়াময়

তাহা নৈলে নমঃশূদ্রে কিসে তারে পায় ?
সাধা-ঋণ তাই দীন নমঃশূদ্র পেল

তব দায় পিতৃদায় তা ছাড়া কি বল ?
মারকাট যাহা ইচছা করিবারে পার

নমঃ তোমা নাহি ছাড়ে তুমি কিসে ছাড়?
দয়া করে এ জাতির ভার নেছ হাতে
.
নিজ গুণে নমঃশূদ্রে হইবে তরাতে
।।
এত যদি ভক্তবর যজ্ঞেশ্বর কয়

বাহ্য-ক্রোধে কহে প্ৰভু অন্তরে সদয়
।।
ভক্ত-পুটুলীয়াতুমি জানি যজ্ঞেশ্বর

কার্যকালে বটং নাস্তিকথার সাগর
।।
বিশেষ গোমস্তা যারা বহু কথা জানে

কথায় তোমার সঙ্গে পারিব কেমনে ?
পিতৃদায় বলে ব্যাখ্যা করিলে বহুৎ

সেই ভরসায় এরা রয়েছে মজুত
।।
আপন গরজে যেবা ভার টেনে নেয়

তারে মান্য করলে কি দোষ কিছু হয় ?
একজনে দেবে শুধু অন্য সবে পাবে

কতকাল বল দেখি চলে এইভাবে ?
শাস্ত্রজ্ঞান তোমারত কম কিছু নাই

কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বলে মনে আছে তাই
।।
দেয়া না থাকিলে কেহ নাহি পায় দান

দান পেতে হলে আগে কর কিছু দান
।।

কাপড়ের কাণিদান দ্রৌপদীর ছিল
দানফলে বস্ত্ররূপে কৃষকে পাইল
।।
দাঙ্গাবাজ নমঃশূদ্রলিখেছে পুলিশ

আচ্ছা শোন আমি করি উচিত শালিশ
।।
কায়স্থ ব্রাহ্মণ আদি বল কোন গুণে ?
ভদ্রলোকআখ্যা পায় কিসের কারণে ?
বিদ্বান তাহারা সবে এই জান মূল

বিদ্বান হইলে ভদ্রকথা নহে ভুল
।।
নমঃশূদ্র চেষ্টা করি হওগে বিদ্বান

দাঙ্গাবাজ গালি যাবে পাইবে সম্মান
।।
এমন পরম_রত্ন_বিদ্যা মহাধন

তার লাগি চেষ্টা এরা করে কি কখন?
ওরা যদি মুক্তি চায় যাবলি করুক

কতটাকা স্কুলে দেবে আমাকে বলুক
।।
ওড়াকান্দী হাইস্কুল করিবারে চাই

ওরা কত চাঁদা দেবে বলুক সবাই
।।
বিদ্যা তরে যেই জন করে কিছু দান

নিশ্চয় তাহার বংশে হইবে বিদ্বান
।।
বিদ্যা তরে দান দিলে পাপ কেটে যাবে

বলিলাম এ বিপদ কিছু নাহি হবে
।।
আবার বলিনু আমি নিশ্চয় করিয়া

দান কর এ বিপদ যাইবে মুছিয়া
।।
দৃঢ় করি বলে যদি প্রভু দয়াময়

জোড় হস্তে সব লোক উঠিয়া দাঁড়ায়
।।
সবে বলে দয়াময় যে আজ্ঞা তোমার

আমরা করিব দান প্রতিজ্ঞা সবার
।।
অন্ধ মোরা এতকাল কিছু বুঝি নাই

তোমার দয়ায় প্রভু অকুলে কুল পাই
।।
ভাব দেখি প্ৰভু তবে সন্তুষ্ট হইল

বলে তোরা বল হরি বিপদ কাটিল
।।
অমনি সকলে বলে বল হরি বল

সকলের চক্ষে এল প্রেম-অশ্ৰুজল
।।

প্রভূ বলে পুনরায় বসহ সকলে
কর সবে সেই কার্য যাহা দেই বলে
।।
শুনিলাম আসিতেছে সে কমিশনার

যথাযোগ্য অভ্যর্থনা করিব তাঁহার
।।
মীডের সঙ্গেতে আমি পরামর্শ করি

সংবাদ পাঠালে সবে এসো তাড়াতাড়ি
।।
এত বলি তাসবারে বিদায় করিল

মীডেরে ডাকিতে প্ৰভু লোক পাঠাইল
।।
শ্রুত মাত্র দ্রুত গতি মীড জী আসিল

প্রভুজী সকল কথা তাঁহারে বলিল
।।
প্রভু বলে এ বিপদে রক্ষা করা চাই

মীড বলে আমি বলি কোন ভয় নাই
।।
আদ্যই লিখিব পত্র ম্যাজিষ্ট্রেট কাছে

আমাকে জানাবে কবে দিন ঠিক আছে
।।
আসিলে কমিশনার তাঁর কাছে যাব

নিশ্চয় তাঁহারে আমি এ বাড়ী আনিব
।।
তোমাকে দেখিলে তাঁর দ্বন্দ্ব ঘুচে যাবে

এ বিপদে নমঃশূদ্র উদ্ধার পাইবে
।।
মীডর সঙ্গেতে এই পরামর্শ করি

নমঃশূদ্রগণে বলে এস তাড়াতাড়ি
।।
ডাকা মাত্ৰ সবে আসি উপনীত হ

প্রভুর চরণে সবে প্রণাম করিল
।।
প্রভু বলে এক কাজ কর সবে মিলে

বহু শুভ হবে জেন এই কৰ্ম ফলে
।।
ওড়াকান্দী আসিবেন সে কমিশনার

তাঁর প্রতি কর সবে যোগ্য ব্যবহার
।।
তারাইল হতে কর পথের সূচনা

দুই ধারে কলা গাছ করহ রচনা
।।
তারাইল হতে পথ আন ওড়াকান্দী

গাছে গাছে দেবদারু পত্র রাখ বান্ধি
।।
মাঝে মাঝে পুষ্পমাল্য তাহাতে দোলাও

শুভ বাক্য লিখি তাহা গাছেতে টানাও
।।

হিন্দু-পল্লী মধ্যে যবে সাহেব আসিবে
নারীদলে দলে দলে হুলুধ্বনি দিবে
।।
বাকী যাহা এই খানে আমি তাকরিব

তোমাদের লাগি আমি সাহেবে ধরিব
।।
মৃতে যদি সঞ্জীবনী সুধা পায় বুকে

মূকে যদি অকস্মাৎ বাণী পায় মুখে
।।
পুত্রহারা পুত্র যদি কোলে পায় ফিরে

মরু যদি ডুবে যায় সাগরের নীরে
।।
অমাবস্যা রাতে যদি পূর্ণচন্দ্ৰ পায়

স্বপ্ন-ভয়াতুর জনে আঁখি মেলি চায়
।।
বিরহিণী সতী পায় পতি দরশন

দুঃসহ নিদাঘে হয় বারি বরিষণ
।।
এই সবে যত সুখ নরের হৃদয়

প্রভুর বচনে সুখ ততোধিক হয়
।।
আনন্দে ছুটিয়া চলে যত লোক জন

আজ্ঞা মতে কার্য করে হয়ে এক মন
।।
তারাইল ওড়াকান্দী দূর পরিমাণ

তিন মাইলের বেশী করি অনুমান
।।
দলে দলে লোক জুটি সাজসজ্জা করে

প্রভুর ইচ্ছায় কার্য তিন দিনে সারে
।।

 

 

কমিশনারে আগমন ও সম্বর্দ্ধনা


তিন দিনে রাস্তাঘাট ফিট ফাট হ

চতুর্থ দিনেতে সে কমিশনার এল
।।
জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট আর এল তাঁর সঙ্গে

ডেপুটী, দারোগা সবে এল নানা রঙ্গে
।।
শ্রীনব গোপাল চাকী কায়স্থ-সন্তান

গোপাল গঞ্জের তিনি ডেপুটি যে হন
।।
প্রভু প্রতি মনে মনে তার হিংসা ছিল

প্রভুর বিরুদ্ধে বহু সাহেবে জানাল
।।

সাহেব হাসিয়া বলে চাকী মহাশয়
তাঁর মত লোক দুষ্ট, তাকি কভু হয়?
তুমি বল মানে তাঁর সব নমঃশূদ্র

এতই সম্মান যাঁর তিনি কিসে ক্ষুদ্র?
যাহা হোক জানা যাবে হলে পরিচয়

আমি ভাবি এ সম্বন্ধে কি করি উপায়?
এক দলে দাঙ্গা করে এই কোন কথা?
বিশেষ মুসলমানে বড়ই একতা
।।
তুমি বল এই দেশে তারা সংখ্যাধিক

তারা বলে মার খাইএকথা কি ঠিক?
দেখা যাক তদন্তেতে কি ফল দাড়ায়?
পরে বুঝে করা যাবে বিহিত উপায়”?
এই ভাবে আলাপন হয় পথে পথে

সাহেব নামিল শেষে নিজ লঞ্চতে
।।
ঘাটেতে দাঁড়ায়ে আছে নমঃশূদ্রগণ

তা ছাড়া মুসলমান রহে অগণণ
।।
নমঃশূদ্র মধ্যে ছিল শ্রীবিধু চৌধুরী

শ্রীশশি ভূষণ বাবু মান্য হাতে করি
।।
ভীষ্ম বাবু আদি করি যতেক প্রধান

সাহেবের মান দিতে সবে আগুয়ান
।।
আর বহু নমঃশূদ্র উপস্থিত হয়

সে সব লিখিতে গেলে গ্রন্থ বেড়ে যায়
।।
মাটিতে নামিল যবে সে কমিশনার

শশীবাবু তাঁর কন্ঠে দিল পুষ্পহার
।।
সাহেব হাসিয়া তাঁরে করিল সম্মান

পরে জিজ্ঞাসিল কথা ডেপুটির স্থান
।।
বলহে মিষ্টার চাকী! এই কোন জন

নমঃশূদ্র কিংবা কোন কায়স্থ ব্রাহ্মণ?”
চাকী বলে ইনি স্যার ওড়াকান্দী বাসী

ঠাকুরের পুত্র ইনি নাম এঁর শশী
।।
সাহেব কহিল চাকী! আর কথা নাই

অগ্রভাগে চল মোরা এর বাড়ী যায়
।।
বাবুরে ডাকিয়া বলে ওগো মহাশয়!
আপনার বাড়ী আমি যাইব নিশ্চয়
।।
কোন পথে যেতে হবে বলুন আমায়

আপনার পিতা বুঝি আছেন আলয়
।।
বাবু বলে মহাশয় করি নিবেদন

আমাকে পাঠাল পিতা এই সে কারণ
।।
আপনারে মাল্য দিয়া করিতে সম্মান

আমাকে বলিল পিতা হতে আগুয়ান
।।
বিশেষে তাঁহার ইচ্ছা আমোদের বাড়ী

আপনার যেতে হবে নিজ দয়া করি
।।
সাহেব হাসিয়া বলে বুঝিয়াছি তাই

তাই ত তোমার সাথে আমি যেতে চাই
।।
শীঘ্র করি পথে চল মিষ্টার ঠাকুর

মনে হয় ওড়াকান্দী নহে কম দুর
।।
এতবলি পথে দরি সাহেব চলিল

পাশে পাশে শশীবাবু চালিতে লাগিল
।।
সাহেব পথেতে চলে দুই দিকে চায়

অপরূপ সাজ সজ্জা দেখিবারে পায়
।।
মনে ভাবে এই শেষ কিন্তু শেষ নয়

যত যায় তত দেখে কথা নাহি কয়
।।
হিন্দু-পল্লী মাঝে যবে সাহেব আসিল

দলে দলে নারী যবে হুলুধ্বনি দিল
।।
সাহেব শশীকে কহে কি শব্দ হইল?”
শশী বাবু বলে স্যার যত নারী গণে

করিল মঙ্গল-ধ্বনি তব দরশনে
।।
আমাদের রীতি এই দেব-পূজা কালে

হুলুধ্বনি করে মিষে যত নারী দলে
।।
দেব-পূজা, শুভকর্ম্মে এই আচরণ

শুভবলি করে বঙ্গে যত হিন্দুগণ
।।
রাজাকে দেবতা-জ্ঞানে হিন্দু কর পূজা

তাই এই ধ্বনি করে বলিলাম সোজা
।।

 

 

সাহেব শুনিয়া কথা প্রীতি হৈল মনে
যত চলে ঘরে ঘরে হুলুধ্বনি শোনে
।।
এই ভাবে পথ চলি ওড়াকান্দী এল

হুলুধ্বনি, জয় ধ্বনি সকলে করিল
।।
অবশেষে উপনীত প্রভুজীর বাড়ী

দেখে লোক দাঁড়াইয়া আছে সারি সারি
।।
বহু বখ্ত নারী সেথা ছিল উপস্থিত

হুলুধ্বনি করে সবে অতি আনন্দিত
।।
মীড সঙ্গে প্রভু তবে আইল বাহুড়ি
সাহেবের হস্ত ধরে মীড অগ্রসরি
।।
প্রভুকে দেখায় বলে এই সে ঠাকুর

সাহেবের চিত্ত তাহে হল ভরপুর
।।
শ্রীকর মর্দ্দন করে দিয়ে নিজ হাতে

প্রভু বলে গৃহ মধ্যে চল মম সাথে
।।
আর এক নিবেদন জানাই তোমায়

বাংলা ভিন্ন অন্য ভাষা মোর জ্ঞাত নয়
।।
তুমি কি বলিবে কথা আমার ভাষায়?
তাহা হলে মোর পক্ষে বড় ভাল হয়
।।
সাহেব হাসিয়া বলে যে ইচ্ছা তোমার

তব বঙ্গো বঙ্গভাষা হবে ব্যবহার
।।
অতঃপর সাহেবের গৃহমধ্যে লয়

ম্যাজিষ্ট্রেট আর মীড সঙ্গে সঙ্গে রয়
।।
চেয়ার পাতিয়া দিল মধ্যের উঠানে

সাহেবে আনিয়া প্রভু বসায় আসনে
।।
সাহেবে বসিয়া তবে প্রভু-প্রতি কয়

একটা আসনে নিজে বসুন মহাশয়
।।
মীড বসে প্রবু বসে বসে ম্যাজিষ্ট্রেট

কিছু দূরে চাকীথাকে করি মাথা হেঁট
।।
তাহা দেখি প্রভু কহে সাহেবের কাছে

আপনার কাছে এক নিবেদন আছে
।।
আপনার ভিন্ন হেথা অন্য কোন জন

আসিবারে নিবারণ করুন এখন
।।
বিশেষতঃ পুলিশের যত কর্ম্মচারী

তারা যেন নাহি হেথা আসে দয়া করি
।।
এই যে কনেষ্টবল দাঁড়াইয়া আছে

দয়া করি উনি যেন নাহি আসে কাছে
।।
সাহেব চাহিয়া দেখে চাকী মহাশয়

কিছু দূরে একা একা দাঁড়াইয়া রয়
।।
সাহেব বুঝিল প্রভু তাঁর নাহি চিনে

তাহাকে কনেষ্টবল করিয়াছে মনে
।।
হাসিয়া সাহেব বলে শুনুন ঠাকুর

যাহা ভুল হইয়াছে আমি করি দূর
।।
পুলিশেষ লোক উনি নহে কদাচার

উনি ত ডেপুটী-বাবু বলিনু বচন
।।
উহাকে আসন দিন, অনুরোধ করি

অতিথি আজিকে উনি আপনার বাড়ী
।।
এত বলি হাতছানী দিয়া ডাকে তাঁরে

আসিল ডেপুটী বাবু সাহেবের ধারে
।।
প্রভুর আজ্ঞাতে ভৃত্য মনেতে বেজার

সাহেব ডাকিয়া বলে প্রভুজীর ঠাঁই
।।
আপনার কথা যত শুনিবারে চাই

প্রভু বলে মহাশয় পুঁছি তব কাছে

ধনী মানী বড়লোক সব দেশে আছে
।।
আমরা দরিদ্র সবে এই বিল-দেশে

সকলি কাঙ্গাল মোরা জানিবে বিশেষে
।।
আচার বিচার মোরা কিছু নাহি জানি

তাহাতে জিজ্ঞাসা করি মনে শঙ্কা গণি
।।
সকলে গৃহে তব আছে যাতায়াত

তাঁর কোন ব্যবহার করে তব সাথ?
কোন উপহার দেয় কিবা অভ্যর্থনা?
আমরা কাঙ্গাল জাতি কিছুই জানিনা
।।
দয়া করি সেই সব বল মোর কাছে

অন্য কথা এর পরে বলিবার আছে
।।

 

 

সাহেব হাসিয়া বলে প্রভুজীর কাছে
এ সম্বন্ধে কিবা কথা বলিবার আছে?
যে-যেমন লোক তার তেম্নি ব্যবহার

সাধ্য অনুযায়ী লোকে দেয় উপহার
।।
রাজা করে স্বর্ণ দান পন্ডিতে পুস্তক

মনোমত দেয়া লোকে যার যাহা সখ
।।
দ্রব্য নহে মন নিয়ে হইবে বিচার

শুদ্ধ মনে দিলে হয় শ্রেষ্ঠ উপহার
।।
প্রভু বলে কথা শুনি ভরসা হইল

দারুণ দুশ্চিন্তা মোর দূর হয়ে গেল
।।
আমরা কাঙ্গাল জাতি অন্য কিছু নাই

বহু কষ্টে জমি হতে কিছু ধন পাই
।।
ফুলের বাগান মোরা কভু নাহি চিনি

মাঠে থাকে দূর্ব্বাদল তাই তুলে আনি
।।
দেবপূজা, রাজপূজা যত শুভকর্ম্ম

ধান্য দূর্ব্বাশ্রেষ্ঠ বলি বলে হিন্দু-ধর্ম্ম
।।
রাজ কর্ম্মচারী বটে রাজশক্তিধারী

মনে বলে রাজজ্ঞানে তাঁরে পূজা করি
।।
অনুমতি যদি হয় তা হলে পুলকে

মান্য করে ধান্য দূর্ব্বাদিব ও মস্তকে
।।
ধান্য দূর্ব্বা দানে যদি করে আশীর্ব্বাদ

শত্রুও বশ্যতা করে, করে না বিবাদ
।।
যাঁরে দেয় তার হয় মহা উপকার

আমি ত করিতে চাই সেই ব্যবহার
।।
প্রভুর বিনয় শুনি সে সাহেব কয়

যাহা কর তাহে বাধ্য আমি সর্ব্বদায়
।।
এমত বচন শুনি প্রভুজী তখন

আজ্ঞা দিল নারীগণে করিতে বরণ
।।
আজ্ঞামাত্রে নারীগণ উপস্থিত হল

ধান্য দূর্ব্বা চন্দনাদি কূলেতে আনিল
।।
ইঙ্গিতে দেখায় প্রভু সে কমিশনারে

নারীগণে ধান্য দূর্ব্বা দেয় তার শিরে
।।
পরে করে হুলুধ্বনি মঙ্গলাচরণ

এই ভাবে ধান্য দূর্ব্বা পেল সর্ব্বজন
।।
যদিও ইংরেজি জাতি সাহেব দুজন

আচার দেখিয়া মুদ্ধ তাঁহাদের মন
।।
মনে মনে তাঁরা ভাবে এ কোন মানুষ

এর কাছে এলে নাহি থাকি নিজ-হুষ
।।
ইংরেজী ভাষায় বলে ম্যাজিষ্ট্রেট ঠাঁই

এমন পবিত্র লোক আমি দেখি নাই
।।
ডেপুটির পানে চাহি কহিল বাংলায়

মনে মনে কিবা ভাবচাকী মহাশয়
।।
বড়ই মহৎ দেখি এই মহাজন

মাঝে মাঝে তুমি হেথা করোআগমন
।।
সাহেবের কথা শুনি চাকি দিল সায়

বলে মাঝ মাঝে আমি আসিব হেথায়
।।
অতঃপর প্রভু বলে সাহেবের কাছে

এক আর্জ্জি সাহেব জী তব ঠাঁই আছে
।।
এই যে ডক্টর মীড পুরুষ মহান

বিশেষ স্বভাব গুণে অতি মান্যবান
।।
এই গ্রামে বাস করে এই মহোদয়

ইনি চাহে খুলিবারে উচ্চ-বিদ্যালয়
।।
গোপালপুরের যত নমঃশূদ্র গণ

সেই স্কুলে চাঁদা দান করে সর্ব্বজন
।।
লেখাপড়া শিখিবারে তাহাদের মন

বড়ই উৎসুক তারা বিদ্যার কারণ
।।
তারা নাহি দাঙ্গাবাজএই কথা বলে

দরখাস্ত গেছে নাকি আপনার স্থলে
।।
আর নাকি শুনিলাম নমঃশূদ্র গন

মুসলমানের আগে করে আক্রমন
।।
মুষ্টিমেয় নমঃশূদ্র আছে এই দেশে

আক্রমণ করে তারা কিসের সাহসে?
অধিক কি কব আর মীড এই আছে

শুনুন জিজ্ঞাসা করে সব তার কাছে
।।

 

হতে পারে দীনহীন নমঃশূদ্র গণ
কিন্তু দঙ্গাবাজ তারা নাহয় কখন
।।
দাঙ্গাবাজ হতে গেলে শক্তি থাকা চাই

সংখ্যা কম নমঃশূদ্র শক্তি কোথা পাই?
আর কথা শুনিলাম এই জন্যে নাকি

পিটুনী পুলিশ দিবে শাসিতে দেমাকী
।।
অবশ্য কাঙ্গাল প্রজা আমরা সকলে

রাজ-আজ্ঞা মানি সবে অতি কুতুহলে
।।
কিন্তু যাহা নিবেদন বলিলাম তাই

জানিয়া দিবেন শাস্তি এই ভিক্ষা চাই
।।
এমত বলিল যদি প্রভু দয়াময়

সাহেবে ডাকিয়া তবে মীড কথা কয়
।।
ইংরাজীতে আলাপন করে দুই জনে

কাছে থাকি শশীবাবু সেই সব শোনে
।।
ধীরে ধীরে মীড কহে সকল বারতা

প্রভুর কেমন শক্তি বলে কোন কথা
।।
সাহেব কহিল মোর সব জানা আছে

ম্যাজিষ্ট্রেট সব কথা আমাকে বলেছে
।।
লাট-দরবারে সে সব ঘটনা ঘটিল

সেই সব ম্যাজিষ্ট্রেট আমাকে কহিল
।।
হেনকালে সাহেবেরে প্রভু ডাকি কয়

এই দেশে হাইস্কুল নাহিক কোথায়
।।
পূর্ব্বে বলিয়াছি আমি মীডের সহিত

স্কুল করিবারে চেষ্টা করেছি বিহিত
।।
আপনার শুভদৃষ্টি তাতে আমি চাই

আপনি ভরসা দিলে বড় সুখ পাই
।।
সাহেব বলিল ইহা উত্তম প্রস্তাব

হাইস্কুল হলে যাবে শিক্ষার অভাব
।।
চেষ্টা করি মীড তুমি হাইস্কুল করো

তুমি চেষ্টা করিলে করিতে ইহা পারো
।।
আমি বলি স্কুল যদি হয় এই খানে

সরকারী দান দিব অতি অল্প দিনে
।।
ঠাকুরের সহযোগে কর এই কাজ

স্কুল পেলে উচ্চ হবে পতিত সমাজ
।।
পুনরায় প্রভু বলে সাহেবের ঠাঁই

কতটাকা হলে মোরা হাইস্কুল পাই?
সাহেব ডাকিয়া মীডে জিজ্ঞাসে তখন

স্কুল ঘরে কত টাকা হবে প্রয়োজন
?
মীড বলে কিছু টাকা আছে তহবিলে

ঘর দিতে পারি আর বারশত পেলে
।।
মীড যদি বলে কথা এরূপ প্রকার

প্রভু বার শত দিতে করে অঙ্গীকার
।।
প্রভু বলে একা আমি টাকা নাহি দিব

স্বজাতি বান্ধবগণে শরিক রাখিব
।।
বহির্ব্বাটি তারা সবে রয়েছে বসিয়া

অনুমতি কর যদি জিজ্ঞাসিব গিয়া
।।
সাহেব বলিল তাতে বাধা কিছু নাই

চলুন সকলে মোরা বহির্ব্বাটি যাই
।।
বহির্ব্বাটি লোকারণ্য করিছে বিরাজ

প্রভু আসি জিজ্ঞাসিল তাহাদের মাঝ
।।
হাইস্কুল করিবারে সম্মত হয়েছি

বার শত টাকা দিব স্বীকার করেছি
।।
এই শুভ কার্য্যে কেহ আছি কি শরিক?
যদি থাক সবে মিলে অংশ কর ঠিক
।।
পভু যবে এই কথা বলিল সকলে

সবে বলে দিব টাকা আর দিব ছেলে
।।
এই ভাবে হইতেছে কথোপকথন

সাহেব মীডের সঙ্গে করিছে গমন
।।
প্রভু বলে ঠিক কর কেবা কত দিবে

সাহেবে জানাব আমি কথা সেই ভাবে
।।
এত বলি প্রভু যবে দৃষ্টি ফিরাইল

দেখিল সাহেব নাই-বুঝি চলে গেল
।।
মনে মনে হাসে প্রভু কথা নাহি কয়

আশ্চর্য্য লীলার ইচ্ছা করে ইচ্ছাময়
।।

 

প্রভু কয় বল সবে কে কি টাকা দিবে?
সাহেব আসিলে ফিরে বলি সেই ভাবে
।।
সবে বলে কর্তা ঐ সাহেব চলে গেলে

প্রভু কয় যায় যাক কি দিবে তাই বল
।।
সকলে জুটিয়া তাই করে পরামিশে

বলে কর্তা বহুলোক আছি এই দেশে
।।
সকলে এখানে আজি নহে উপস্থিত

কোন রূপে এই কার্য্য করিব বিহিত?
এই নিবেদন করি তব রাঙ্গা পায়

মোরা আজ যাই সবে যার যার গাঁয়
।।
প্রতি গ্রামে অংশ মোরা ঠিক করি ল

সেই বার্তা আপনার গোচরে আনিব
।।
যার কাছে টাকা দিতে আজ্ঞা হবে তব

আমরা সরল প্রাণে তাঁরে টাকা দিব
।।
প্রভু কয় মন্দ নয় সবে যা বলিলে

সেইভাবে কাজ তবে কর সবে মিলে
।।
সকলে বিদায় নিতে করে আয়োজন

হেনকালে শুন এক আশ্চর্য্য ঘটন
।।
সাহেব মীডের সঙ্গে কতদূর যায়

কি জানি কি মনে তার পড়িল তথায়
।।
মীডে ডাকি বলে মীড! অন্যায় হইল

বিদায় হইতে মোর দেড়ী পড়ে গেল
।।
ঠাকুরের কাছে কিছু আমি বলি নাই

বড়ই অন্যায় হল মনে ভাবি তাই
।।
এইরূপ কার্য্য নহে কিছুতে উত্তম

বিশেষতঃ ইংরেজের এ নহে নিময়
।।
এত বলি দ্রুতগতি সাহেব ফিরিল

প্রভুর নিকটে গিয়া উপস্থিত হ
।।
বিনয়ে প্রভুকে কহে শুন মহাশয়

মম পক্ষে হল আজ বড়ই অন্যায়
।।
বিদায় না মাগি আমি গিয়াছিনু চলে

বড়ই লজ্জিত আমি হই তব স্থলে
।।
শুভমনে এইক্ষণে দেহ গা বিদায়

মোর মনে স্মৃতি তব রহিবে নিশ্চয়
।।
প্রভু বলে কোন চিন্তা নাহি মহাজন

আনন্দে আপনি তবে করুন গমন
।।
আমাদের প্রতি যেন কৃপাদৃষ্টি রয়

অধিক কি কব হোক রাজার বিজয়
।।
চিরসুখী হন যেন রাজ-রাজেশ্বর

এই ইচ্ছা ভিন্ন ইচ্ছা নাহিক আমার
।।
শুনিয়া প্রভুর কথা মাথা নোয়াইয়া

চলিগেল সাহেবেরা আনন্দিত হৈয়া
।।
এই সব কান্ড দেখি বিস্মিত সবাই

সবে বলে হেন রত্ন মোরা চিনি নাই
।।
ভস্ম মাঝে অগ্নি যথা লুক্কায়িত থাকে

অবোধ নমঃর ঘরে প্রভু রহে ঢেকে
।।
পর্ব্বতের মধ্যে অগ্নি ঘুমাইয়া রয়

ঠুক্নির আঘাতে অগ্নি প্রজ্বলিত হয়
।।
কাষ্ঠ দিয়া যদি কেহ করয় আঘাত

অগ্নি নাহি জ্বলে কাষ্ঠ নিজে খন্ডপাত
।।
জহুরী রতন চিনে যতন করয়

ধর্ম্মের মর্ম্মার্থ পাপী কভু নাহি পায়
।।
এইরূপে সবে মিলি বিলাপ করিল

প্রভুর নিকটে সবে বিদায় মাগিল
।।
এদিকে সাহেব চলি গেল নিজ স্থান

নমঃশূদ্রগণ সবে পেল পরিত্রাণ
।।
পিটুনি পুলিশ আর নাহিপ প্রয়োজন

সাহেব করিয়া দিল এমত লিখন
।।
ভদ্র ও বিনয়ী হল নমঃশূদ্র জাতি

এমত রিপোর্ট লিখি রাখিলা সম্প্রতি
।।
এসব সম্ভব হল শ্রীগুরু-কৃপায়

নমঃকুলে অবতীর্ণ নিজে দয়াময়
।।
পতিত দুঃখিত জনে উদ্ধারের লাগিল

ব্যথিতের সাথে নিজে হল দুঃখ-ভাগী
।।

 

অনন্ত গুণের সিন্ধু প্রভু গুরুচন্দ্র
তাহে নাহি ডুব দিল মূঢ় মহানন্দ
।।

 

মহাত্মা শ্রীশশীভূষণের চাকুরী প্রাপ্তি


ফরিদপুরেতে হল লাট দরবার

ইতিপূর্ব্বে বলিয়াছি সেই সমাচার
।।
চাকুরী লাগিয়া শশী কিছু পূর্ব্বে তার

নানাস্থানে ঘরে কএ করি দরবার
।।
নমঃশূদ্র জাতি বলি মিলেনা চাকুরী

প্রভুর নিকটে বলে দুঃখে যাই মরি
।।
প্রত্রের দেখিয়া দুঃখ দয়াল ঠাকুর

নিজ গুণে করিলেন মনোব্যাথা দূর
।।
মীডরে ডাকিয়া কহে দুঃখের বারতা

পূর্ব্বভাগে লিখিয়াছি সেই সব কথা
।।
লাট দরবারে মীড সমস্ত খুলিয়া

লাটেরে সকল কথা বলে বুঝাইয়া
।।
লাটের আদেশে তাই মিলিল চাকুরী

এতদিন প্রভু তাহা রাখে চুপ করি
।।
কি জানি প্রভুর মনে কিবা ইচ্ছা ছিল

যেদিন কমিশনার এসে ফিরে গেল
।।
চাকরী-সনদ এল ঠাকুরের বাড়ী

বড়বাবু যাবে তাহা জলপাইগুড়ি
।।
সেইখানে হল তিনি সাব রেজিষ্ট্রার

সকলে সন্তুষ্ট হল শুনি সমাচার
।।
জয় জয় ধ্বনি উঠে জুড়ি দর্ব্বদেশ

এ জাতির দুঃখ-রাত্রি এতদিনে শেষ
।।
চাকুরী পাইয়া বাবু দেশ ছাড়ি যায়

সবে কহে ধ্য ধন্য প্রভুর তনয়
।।

 

 

 

 

ওড়াকান্দী হাইস্কুল স্থাপন


উনিশ শ আট অব্দে আছে নিরূপণ

ওড়াকান্দী হাইস্কুল হইল গঠন
।।
প্রভুর জমির পরে ঘর তুলি দিল

সেই ঘরে প্রথমেতে স্কুল হইল
।।
হইল অষ্টম শ্রেণী শ্রেণীর নিশানা

সেইভাবে হাইস্কুল হইল গঠনা
।।
সরকারী সাহায্যাদি পাইবার আশে

দরখাস্ত করে মীড ডিরেক্টর পাশে
।।
কমিশনারের তাতে সুপারিশ ছিল

অনায়াসে সরকারী সাহায্য মিলিল
।।
প্রতিমাসে পচাত্তর টাকার প্রমাণ

সরকার হতে করে সেই স্কুলে দান
।।
এইভাবে চারিবর্ষ ক্রমে গত হয়

মঞ্জুর হইল স্কুল প্রভু কৃপায়
।।
স্কুলের অর্থ লাগি আপনি ঠাকুর

মীড সহ ঘুরিলেন বহু বহু দুর
।।
নিজ ভক্ত হতে প্রভু অর্থ চাহি লয়

বারশত টাকা প্রভু এইভাবে দেয়
।।
এইত নমঃর মধ্যে আদি বিদ্যালয়

ওড়াকান্দী শীর্ষস্থাপন তাতে সবে কয়
।।
এই বিদ্যালয় হতে শিক্ষা পেল যারা

অনুন্নতজাতির মধ্যে মান্যবান তারা
।।
উকিল মোক্তার কত ডাক্তার হয়েছে

উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কত চাকুরী পেয়েছে
।।
ব্যারিষ্টার হল কেহ হল ইঞ্জিনিয়ার

কেহ হন মুনসেফ, কেহবা পেস্কার
।।
কাউন্সিল, য়্যাসেমব্লীর মেম্বর হয়েছে

এম,,বি,এ পাশ করা কতই রয়েছে
।।
সবের মূলেতে দেখি শ্রীগুরুর দয়া

তাঁর দয়া-বৃক্ষ-তলে পেল সবে ছায়া
।।

যে কার্য করেন প্রভু জীবে তাই ধরে
-আদর্শ দেখে স্কুল আজ ঘরে ঘরে
।।
প্রভুর কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীসুরেন্দ্র নাথ

এই স্কুলে পাঠ করে সহপাঠী সাথ
।।
ঊনিশ শ বার অব্দে পাঠ সাঙ্গ করি

প্রবেশিকা পাঠ করে বলে হরি হরি
।।
প্রভু সঙ্গে পূর্ব্বে মীড অঙ্গীকার কৈল

যেমন করিল মীড তেমনি হইল
।।
প্রতি ক্লাশে এক ঘন্টা বাইবেল পড়ে

দেখিয়া মীডের প্রাণ আনন্দেতে নড়ে
।।
কল্পনাতে মীড স্বপ্ন করয় রচন

অবশ্য খৃষ্ঠান হবে এর কতজন
।।
মনে মনে প্রবু তাতে নহে কিন্তু বাধ্য

চক্রীর চক্রান্ত-ভেদ নরে নহে সাধ্য
।।
সে সব বৃত্তান্ত পরে করিব লিখন

এবে বলি অন্য যাহা আছে বিবরণ
।।
স্কুলের জন্যেতে মীড বহু চেষ্টা করে

প্রভু বলে ধন্য মীড তুমি এ সংসারে
।।
যে কার্য করিলে তুমি দয়ার সাগর

এই কার্যে নাম তব হইবে অমর
।।
প্রভুর বচন সত্য হল পরে পরে

বৃদ্ধাকালে মীড গেল আপনার ঘরে
।।
অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশে আপন আলয়

কর্ম্ম শেষে যীশু-ভক্ত দেশে চলি যায়
।।
তাঁর কীর্তি মনে করি নমঃশূদ্র সব

ওড়াকান্দী স্কুলে রাখে গুণের সৌরভ
।।
ওড়াকান্দী মীড স্কুলকরিয়াছে নাম

মীড কীর্তি-ধ্বজা সেথা উড়ে অবিরাম
।।
নমঃশূদ্র আদি শিক্ষাকেন্দ্র ওড়াকান্দী

প্রভুর করম-ক্ষেত্রে কর জোড়ে বন্দি
।।

 

 

শ্রীযুক্ত কুমুদ বিহারী মল্লিক ও অন্যান্যের চাকুরী প্রাপ্তি


উনিশ শ সাত অব্দে শ্রীশশীভূষণ

কার্য্য পেয়ে করিলেন বিদেশে গমন
।।
এই সমাচার গেল সকলের কাছে

সকলের প্রাণ তাতে আনন্দেতে নাচে
।।
তাঁরা সবে মনে ভাবে নিশ্চয় এখন

নমঃশূদ্রে কার্য পাবে না হবে লঙঘন
।।
আদি-বাধা শশী বাবু দিয়াছে ভাঙ্গিয়া

খোলা পথে যাব মোরা নিশ্চিন্ত হইয়া
।।
এত ভাবি সবে জুটি ওড়াকান্দী এল

প্রভুর নিকট পুনঃ কহিতে লাগিল
।।
দয়া করি শোন প্রভু করি নিবেদন

উপায়-বিহীন মোরা সবে অভাজন
।।
উপায় করুন প্রভু অগতির গতি

হতাশা হয়েছি মোরা সকলে সম্প্রতি
।।
প্রভু বলে ভয় নাই শুন বাপধন

সকলে চাকুরী পাবে না হবে লঙ্ঘন
।।
মীডেরে সকল কথা বলিয়াছি আমি

কিছুকাল থাক সবে চুপ করে থামি
।।
বলিতে বলিতে কথা মীড উপস্থিত

মীডেরে দেখিয়া প্রভু বড় পুলকিত
।।
আদরে আসনে তারে প্রভু বসাইল

অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করি সব দেখাইল
।।
মীড বলে বড়কর্তাবুঝিয়াছি সব

এই কার্য হলে তবে জাতির গৌরব
।।
এরা সবে দরখাস্ত করিয়াছে কিনা?
চাকুরী হয় না কভু দরখাস্ত বিনা
।।
সকলে মীডেরে কহে দিয়াছে দরখস্ত

কিন্তু কোন খোঁজ নাই দুঃখ এই মস্ত্
।।
মীড বলে চিন্তা নাই ভেঙ্গেছে দুয়ার

শশী কার্য্য পেয়ে হল এই জাতি উদ্ধার
।।
শীঘ্র করি কলিকাতা যাইতেছি আমি

দেখি গিয়ে দরখাস্ত কোথা গেছে থামি
।।
এত বলি তাহাদিগে বিদায় করিল

কিছু দিন পরে মীড কলিকাতা গেল
।।
কুমুদের কার্য্য লাভে বাধা কিছু হল

ভিন্ন-জেলা-বাসী বলি সাহেব কহিল
।।
কুমুদের কাছে সব গেল সমাচার

মনো দুঃখে সে কুমুদ করে তাহাকার
।।
উপায় কি করে ভেবে গেল ওড়াকান্দী

প্রভুর নিকটে গিয়া বলিতেছে কান্দি
।।
বড়ই নিরাশ-চিত্তে আসিয়াছি হেথা

উপায় করুন প্রভু সর্ব্বফল দাতা
।।
সকল শুনিয়া প্রভু বলিল তাঁহারে

ভয় নাই তুমি গিয়া বল সহেবেরে
।।
ওড়াকান্দীবাসী তুমি বাস এ জেলায়

এই কথা বল গিয়া যাহা ভাগ্যে হয়
।।
অভিভাবকের কথা জিজ্ঞাসা করিলে

আমাকে অভিভাবক দিও তুমি বলে
।।
আমি বলি ভয় নাই চাকুরী মিলিবে

নিশ্চয় ডেপুটী তুমি এই বঙ্গে হবে
।।
প্রভুর বাক্যেতে তেহ মূঢ় আস্থা করি

কথামত কাজ করি পাইল চাকুরী
।।
চাকুরী সনদ পত্র এল ওড়াকান্দী

গুরুচাঁদে করে পূজা করজোড়ে বন্দি
।।
মোহন তারিণী আর শ্রীরাধা চরণ

নিজ মনোমত কার্য পেল সবজন
।।
নমঃশূদ্র কার্য পেল প্রভুর দয়ায়

চারি ধারে সবে বলে জয় জয় জয়
।।
জয় গুরুচাঁদ ধ্বনি গাহে সর্ব্ব লোক

নমঃশূদ্র প্রাণে পায় অনন্ত পুলক
।।
আনন্দে সকলে কহে শুন সবে ভাই

ঘরে ঘরে এইরূপ ছেলে থাকা চাই
।।
দলে দলে মেয়ে ছেলে ছুটিল ইস্কুলে

প্রাণে পণে ছুটি সবে বিদ্যা পাবে বলে
।।
বিদ্যার তরঙ্গে নমঃশূদ্র ঝাঁপ দিল

গুরুচাঁদ কৃপাগুণে এ সব ঘটিল
।।

 

প্রেম তরঙ্গে শ্রীশ্রীহরিগুরুচাঁদ প্রস্তাবনা


পিতাপুত্র অভেদাত্মা অবতীর্ণ হল

ধর্ম্মশক্তি কর্ম্মশক্তি একত্রে মিশিল
।।
বাহ্য জগতেরে নিয়ে লীলা-কর্ম্মকান্ড

ভক্ত সঙ্গে গূঢ় খেলা তরায় পাষান্ড
।।
যেই কান্ডে যেই থাকে দেখে সেই ভাবে

ভাবের ভাবুক হরি থাকে নিজ ভাবে
।।
এই ভাব গুরুচাঁদে করিয়া প্রত্যক্ষ

কবিরসরাজ তাই দিয়াছেন সাক্ষ্য
।।
হরি লীলামৃত গ্রন্থে করিয়াছে ধার্য্য

বাহিরে ঐশ্বর্য্য প্রভু অন্তরে মাধুর্য্য
।।
সংসার জুড়িয়া তাঁর কর্ম্মধারা চলে

নিরালে কাঁদায় ভক্তে প্রেম-খেলাচ্ছলে
।।
বাহির দেখিল যারা তারা বলে ডাকি

ধর্ম্ম-শক্তি গুরুচাঁদে মোরা নাহি দেখি
।।
অবশ্য চরিত্র ক্ষেত্রে তাঁর তূল্য নাই

কি দিয়ে কি করে তাহা বুঝে নাহি পাই
।।
আর ভাবি কোনগুণে এতলোক আসে

ভারে ভারে টাকা দেয় কিসের বিশ্বাসে?
তাতে মনে হয় উনি যাদু কিছু জানে

তাই দিয়ে দলে দলে ভক্ত টেনে আনে
।।
অন্তর দেখিল যারা সঁপিয়া অন্তর

বারিধারা-সম দুই চক্ষে বহে লোর
।।
অন্তরঙ্গে তাঁর সঙ্গে যার হল দেখা

সে বলে এরূপ দেখে যায় নাকি থাকা?’

 

 

বালুতলে ছুটে চলে ফাল্গু-নদী ধারা
বাহিরে দেখায় শুষ্ক, বুকে সুধা-ভরা
।।
বালি ঠেলি যেই জন পশিয়াছে তলে

নিদাঘে তাপিত প্রাণ স্নিগ্ধ তার জলে
।।
তাই ভক্ত কান্দি বলে হেন দেখি নাই

অভক্তে রাগিয়া কহে পেলে কোন ছাই
।।
ভক্ত বলে তুমি অন্ধ জ্ঞানচক্ষু নাই

অভক্ত হাসিয়া কহে কথার বালাই
।।
ভক্ত বলে প্রেমনীরে ডুব একবার

গর্ব্বী বলে নাহি তত গরজ আমার
।।
ভক্ত বলে গুরুচাঁদ সর্ব্বসিদ্ধি-দাতা

অবিশ্বাসী বলে তুমি বল ভন্ড কথা

ভক্ত বলে মরা-দেহে পাইয়াছে প্রাণ

দুষ্ট বলে ঠাকুরের পুত্র মল কেন?
ভক্ত বলে তিনি হন সম্বন্ধ রহিত

ভন্ড বলে সম্বন্ধটা টাকার সহিত
।।
যাহার যেমন মন সে দেখে তেমন

মনোরমাকারী হরি মানস-রঞ্জন
।।
কর্ম্মক্ষেত্রে গুরুচাঁদে এক ভাবে দেখে

ভক্ত ভাবে প্রভু কেন দুষ্টগণে ডাকে
।।
স্বার্থের খাতিরে আসি কর্তা, কর্তা, কয়

দূরে গেল নিন্দাবাদে পঞ্চমুখ হয়
।।
জানিয়া ভক্তের মন ভকত-রঞ্জন

বাক্যচ্ছলে একদিন কহিল বচন
।।
মম পিতা হরিচাঁদ বলেছিল কথা

তারক আপন গ্রন্থে লিখেছে সে গাঁথা
।।
শ্রীরাম ভরত সাধু ওড়াকান্দী রয়

তাঁহাকে সকল ভক্তে করে মহাভয়
।।
রামধন নামে ভক্ত ছিল এই বাড়ী

গাভী গুরু ঘুরাইল মলেনেতেজুড়ি
।।
অন্য এক নারী দেখ মাছ কেটে ছিল

এ সব দেখিয়া সাধু অতি ক্রুদ্ধ হল
।।
উভয়ের মারিবারে করে আয়োজন

পিতা আসি বহু কষ্টে করে নিবারণ
।।
পতিার কথায় রাম নিরস্ত হইল

উভয়েরে তাড়াইতে পিতাকে কহিল
।।
পরম দয়াল পিতা পতিত পাবন

দয়া করে বলেছিল মধুর বচন
।।
বাড়াইয়া দিল পরে চলে যাবে ওরা

পতিত পাবন নাম বৃথা হবে ধারা

সেই কথা সর্ব্বদাই আমি ভাবি বসে

যাহারে তারিব তারে বাড়াইব কিসে?
গঙ্গাজলে বিষ্ঠা ফেলে তাতে কিবা হয়

পতিত-পাবনী গঙ্গা সকলে তরায়
।।
কি জানি কাহার ভাগ্যে কবে কিবা ঘটে

অভক্তের ভক্ত হতে বাধা নাই মোটে
।।
অভক্ত দুভাই ছিল জগাই মাধাই

তারা কেন ভক্ত হল বল দেখি তাই?
আত্মতত্ত্ব না জানিয়া কত মূর্খ জন

দর্প ভরে করে থাকে কত আস্ফালন
।।
বিধাতার বাধাহীন নিয়ম বিধানে

দর্প যায় শান্ত হয় কত দুষ্ট জনে
।।
তাই বলি অভক্তেরে ক্রোধ নাহি কর

যার যার নায় উঠে যার পাড়ি ধর
।।
এমত প্রবোধ বক্তে দিল দয়াময়

পরে কিবা ইচ্ছা করে বলিব ত্বরায়
।।
দুই পথে দুই ধারা চলে একদিকে

গুরুচাঁদ ইচ্ছা করে মিলাবে দোঁহাকে
।।
কর্ম্মশূণ্য ধর্ম্মাচার প্রলাপ বচন

ইচ্ছা করে তাই দোঁহে করিতে বন্ধন
।।
হরিচাঁদ রূপে কেহ যেই ধর্ম্মনীতি

সেই তত্ত্ব বুঝাইতে চাহে না সংপ্রতি
।।
হাতে কাম মুখে নামএই নীতি সার

ইচ্ছা করে ভক্তে দিতে দয়াল এবার
।।

 


সংসারী পক্ষে পালা সর্ব্বনীতি রয়

ধর্ম্মনীতি, কর্ম্মনীতি যত নীতিচয়
।।
ক্রমে ক্রমে সেই পথে ভক্তকে টানিল

ভক্ত দিয়ে ভক্তাধীন জগত তরা
।।

 

ধর্ম্ম ও কর্ম্ম সম্মিলনে শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ


আর দিন ভক্তগণে প্রভু ডাকি কয়

শুন শনু সাধুগণ শূণ্য পরিচয়
।।
এক ব্যক্তি ছিল তার বৃহৎ সংসার

বহু পুত্র কন্যা দাস দাসী ছিল তাঁর
।।
বহু লোক হয় যদি এক পরিবারে

কি দশা ঘটিতে পারে বুঝহ অন্তরে
।।
কর্ম্মক্ষয় পঞ্চপুত্র শুধু কর্ম্ম করে

বাকী সব নিদ্রালস থাকে দূরে দূরে
।।
ভূমি আদি চাষ করি যত কিছু হয়

পঞ্চ পুত্র সব করেপিতা সাথী রয়
।।
কার্যাশেষে সন্ধ্যাকালে পুত্র পঞ্জ জনে

পিতা ডাকি কাছে লয় মধুর বচনে
।।
ধর্ম্মতত্ত্ব, প্রেমালাপ, পিতা কহি যায়

ভক্তিভরে শুনে তারা বসিয়া তথায়
।।
একদিন পঞ্চপুত্র পিতার নিকটে

আপন মনের কথা বলে অকপটে
।।
তারা সবে কার্য করে অন্যে নিদ্রা যায়

এই চিন্তা তাহাদিগে বহু দুঃখ দেয়
।।
পিতার নিকটে তাই বলিল খুলিয়া

কথা শুনি পিতা তবে বলিল হাসিয়া
।।
বৃথা দুঃখ কর সবে শুন দিয়া মন

তোমাদের যোগ্য নহে এসব বচন
।।
কোন জনে বল পিতা কর্ম্মভার দেয়

তারে ভার দেয় পিতা যারে ভার সয়
।।
আর দেখ পঞ্চ-পুত্র কথা মিথ্যা নয়

আমি সঙ্গে থাকি সব কাজের সময়
।।
তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে সদা আমি রই

তোমাদের দুঃখে দুঃখী সুখে সুখী হই
।।
তোমরা বান্ধব মোর প্রিয় হতে প্রিয়

কর্ম্মগুণে পেয়ে মোরে দুঃখ না করিও
।।
আর দেখ প্রেতিবেশী সবে এই কয়

পঞ্চ ভাই সবে সৎ অতি মহাশয়
।।
অলস পড়িয়া যারা কার্য নাহি করে

শুধু শুধু অন্ন-ধ্বংস করে এ সংসারে
।।
তাহাদের কথা কেহ নাহি আনে মুখে

পিতৃস্নেহে-হারা তারা থাকে মহাদুঃখে
।।
তোমরা কি হতে চাও তাদের মতন?
যশহীন শান্তিহীন সুখেতে মগন?
তোমাদের পক্ষে ভাগ্য এরূপ প্রকার

জীবনেতে কভু নাহি পাবে অবসর
।।
চিরকাল দুঃখে যাবে কর্ম্মের মাঝারে

কিন্তু সদা সঙ্গে পাবে শ্রীহরিচাঁদেরে
।।
আর যদি সুখভোগ করিবারে চাও

ভক্তি ছেড়ে ভুক্তি নিয়ে সংসার পাতাও
।।
কোন পথ চাই সবে বল মোর ঠাঁই

যাহা চাবে তাহা পাবে ইথে ভুল নাই
।।
এই কথা প্রভু যদি বলিল প্রবন্ধে

ভক্ত সবে অশ্রুনীরে ভাসে প্রেমানন্দে
।।
করজোড় করি ভক্ত করে নিবেদন

জড় সুখে প্রভু মোরা চাহিনা কখন
।।
যত দুঃখ হয় হোক শঙ্কা নাহি করি

তুমি যদি সাথে থাক অকুল কান্ডারী
।।
যেই কর্ম্ম দিবে প্রভু প্রাণপণ করি

অবশ্য সাধিব তাহা বাঁচি কিম্বা মরি
।।
শক্তি, ভক্তি, একাসনে আসিয়া বসিল

ধর্ম্ম-কর্ম্ম-সম্মিলন শ্রীগুরু করিল
।।

 

মতুয়া-জীবন-পট বিভিন্ন আকারে
দেখা দিল কর্ম্মক্ষেত্রে ধর্ম্ম-ভিত্তি পরে
।।

 

সমসাময়িক ভক্ত পরিচয়

যবে প্রভু হরিচাঁদ করে লীলা সাঙ্গ
বহুত হইল ভক্ত তাঁর অনুসঙ্গ
।।
হীরামন গেল চলি গেল মৃত্যুঞ্জয়

গেলাক ছাড়িল দেহ বিরহ-ব্যথায়
।।
শ্রীরাম ভরত পরে উদাসী হইল

কেবা জানে কোন পথে কোন দেশে গেল
।।
প্রেমে-বাধ্য-ভক্ত যারা বিরহে পুড়িল

শুধু মাত্র দেহধারী গোস্বামী তারক

মহানন্দ সঙ্গে ফিরে হইয়া পুলক
।।
হরিপাল শ্রীঅক্ষয়, মহেশ বেপারী

শ্রীদেবীচরণ সাধু নিবাস বানেরী
।।
কবিবর হরিবর দূর্গাপুর বাসী

জগদীশ, কুমারেশ মত্ত হল আসি
।।
হাদান বদন রায় গোপাল বিশ্বাস

নেপাল বিপিন সাধু কেনাভাঙ্গা বাস
।।
গঙ্গাচর্ণা বাসী সাধু অশ্বিণী কুমার

কার্ত্তিক যাঁহার পিতা বিদিত সংসার
।।
যাদব বিশ্বাস আর যাদব মল্লিক

শ্রীযাদব ঢালী নাম পরম নৈষ্ঠিক
।।
বৈরাগী চন্ডিচরণ তালতলাবাসী

সূর্য্যনারায়ণ হে হীরামনের মাসী
।।
বাসুড়িয়া বাসী জানি শ্রীরাই চরণ

তারকের আশীর্ব্বাদে সাধক-জীবন
।।
পাতলা নিবাসী ভক্ত নাম ধনঞ্জয়

গুরুচাঁদ পদে নিষ্ঠা যাঁর অতিশয়
।।
শ্রীবিধু চৌধুরী আর ভক্ত যজ্ঞেশ্বর

রামতনু সাধু যাঁর পদ্মবিলা ঘর
।।
কৃষ্ণপুর বাসী ভক্ত তারিণীচরণ

ব্রহ্মদেশে কার্য করে ডাক্তার সুজন
।।
সোনাতন, বিচরণ শ্রীষষ্ঠী চরণ

বাবুরাম, মাধবেন্দ্র, এই দুইজন
।।
টুঙ্গীপাড়া বাস সাধু শ্রীতপস্বী রাম

ঝোঁকে ঝোঁকে করে যিনি শুধু হরিনাম
।।
শ্রীদেবীচরণ সাধু মহিমা অপার

দেশে দেশে নাম ধর্ম্ম করিল প্রচার
।।
দেবীচাঁদ শ্রীতারক আর মহানন্দ

বিশ্বজীবে বাটি দিল প্রেম-মকরন্দ
।।
শ্রীদেবীচাঁদের গুণে বলিহারী যাই

যিনি ওড়াকান্দী আনে গোপাল গোঁসাই
।।
সুন্দরবনের ধারে খুলনা জিলায়

লবণাক্ত দেশে কেহ প্রচারে না যায়
।।
গুরুচাঁদ আজ্ঞা দিল শ্রীদেবীচরণে

শোন দেবী এক কথা জাগে মোর মনে
।।
দক্ষিণ বাদার কাছে কয়টী জেলায়

ঠাকুরের লোক আছে তাই মনে হয়
।।
সেই দেশে যাও তুমি নাম প্রচারিতে

তাহাতে মঙ্গল বহু হবে এ জগতে
।।
সেই আজ্ঞা দেবী দক্ষিণিতে যায়

তাহে বহু ভক্ত হৈল খুলনা জিলায়
।।
লহ্মীখালী গ্রামের ঘর শ্রীগোপাল সাধু

নামে মত্ত হয়ে পান করে প্রেম-মধু
।।
তাঁহার মামাতো ভাই শ্রীমাধব নাম

শ্রীনাথ মন্ডল নামে বেতকাটা গ্রাম
।।
এক সঙ্গে সবে যায় ধাম ওড়াকান্দী

গুরুচাঁদে রূপে মন খে এল বন্ধী
।।
এই মত যবে মাত্র ভক্ত সম্প্রদায়

মতুয়া-জীবন-পট প্রভুজী উল্টায়
।।

 

 

 


ধর্ম্ম-কর্ম্ম-সম্মিলনে ভক্তের জীবন

আপনি গড়িলা প্রভু জীবের কারণ
।।
আসক্তি-বিহীন-কর্ম্ম ভক্তে দিল শিক্ষা

শিক্ষা দিয়া করে প্রভু তাহার পরীক্ষা
।।

 

১৩০৯ সালে শ্রীধাম ওড়াকান্দীর অবস্থা


হরিচাঁদ নর-লীলা সাঙ্গ করি গেল

গুরুচাঁদ ওড়াকান্দী ধামেশ্বর হল
।।
আদি পর্ব্বে ভক্ত সনে ছলনা করয়

তারক চিনিয়া বলে চিনেছি তোমায়
।।
উদাসীন সাজিবারে মনে কৈল আশা

সত্যভামা দেবী তাহে করিল নিরাশা
।।
সংসারীর সাজে প্রভু আপনা লুকায়

অর্থ চাই’ ‘অর্থ চাই-ভাব দেখায়
।।
কিসে অর্থ কোথা অর্থ খোঁজে সেই পথ

ব্যবসায় করে প্রভু বৃহৎ বৃহৎ
।।
রাজসিক ভাবে প্রভু চলিবারে চায়

রাজ-তুল্য তৈজসাদি আনিল আলয়
।।
পুত্রগণে শিক্ষা দেয় বিবিধ বিধানে

বড় বড় ঘর হতে পুত্র-বধু আনে
।।
সুবৃহৎ জলাশয় করিল খনন

ইস্টক নির্ম্মিত হর্ম্ম্য হইল গঠন
।।
হরিচাঁদ নাহি করে রাজসিক ক্রিয়া

সহজ জীবন চলে উদাসী সাজিয়া
।।
প্রভু বলে গৃহী পক্ষে নহে এ জীবন

রাজসিক নীতি গৃহী করিবে পালন
।।
গৃহী পক্ষে অর্থ হয় পরম আশ্রয়

অর্থ রূপে লহ্মী সাথে নারায়ণ রয়
।।
খাট আনে গদি করে আনিল চেয়ার

ঝাড় বাতি আনে সাথে ঢাকনি তাহার
।।
রাজগৃহে যেই যেই দ্রব্য শোভা পায়

গুরুচাঁদ আনিলেন আপন আলয়
।।
অতঃপর তের শত নয় সাল এলে

দশভূজা দুর্গা-পূজা করে কুতুহলে
।।
বহিরঙ্গে সবে ভাবে এই কোন ভাব?
এ ভাব নহে ত কোন সাধুর স্বভাব
।।
বড়কর্তা বটে পুত্র শ্রীহরিচান্দের

কিন্তু তিনি নাহি রাখে পিতৃ-কর্ম্ম-জোর
।।
বড় লোক হতে দেখ বড় কর্তা চায়

নৈলে কি সাধুর পুত্র রাজ ভাবে রয়?
প্রমাণ তাহার দেখ কাটিয়াছে চুল

এই কার্য্য বড় কর্তা করিয়াছে ভুল
।।
এই মত জনে জনে কত কথা কয়

দূরে দূরে বলে বটে কাছে চুপ রয়
।।
বহিরঙ্গ ভক্ত যারা ভাব নাহি বুঝে

তারা বলে দেখে যাই সব চোখ বুজে
।।
সেই রাম সেই ধাম নাহি কিছু আজ

নিজ মনে বড়কর্তা করে সব কাজ
।।
প্রভুর মুখের বাক্য কোন ভাবে ঠেলি

তাই থাকি চুপ করে কথা নাহি বলি
।।
অন্তরঙ্গ ভক্ত গণে এই সব শুনি

প্রভুকে জানায় যত বিরুদ্ধ-কাহিনী
।।
প্রভু বলে কিবা ছাই বল মোর কাছে

দেখা যাক কত ভক্ত থাকে মোর পাছে
।।
আমি ত বিষয়ী বটে তাতে নাই সন্দ

কেহ মোরে ভাল বলে কেহ বলে মন্দ
।।
তাতে কিবা আসে যায় মূল রাখ ঠিক

এক দৃষ্টে ধর পাড়ি ছেড়োনা নিরিখ
।।
আর মোন বলি যাহা কথা মিথ্যা নয়

কোন ভাবে এ জাতির মান বৃদ্ধি হয়
।।
চিরকাল যেই ভাবে কাটিয়াছে দিন

বসন-ভূষণে সবে দীন হতে দীন
।।

 

সব কাজ সব ভাবে বড় যদি হয়
জাতির উন্নতি তাতে আসিবে নিশ্চয়
।।
সে-আদর্শ আমি যদি নিজে না দেখাই

এজাতি কোথায় পাবে বল শুনি তাই?
আর শোন ভক্তগণ নিগূঢ় বারতা

তত্ত্বজ্ঞানী জানে মর্ম্ম অন্যে পাবে কোথা?
যে-জন যে-ভাবে থাকে-সেইভাবে পায়

ভিক্ষুকের ঘরে বল লহ্মী কবে যায়?
ভিক্ষুকের মুষ্টি ভিক্ষা সবে দিয়া থাকে

রাজা যদি চায় ভিক্ষা পায় লাখে লাখে
।।
বিধির বিধানে তাই দেখি তারতম্য

জ্ঞানী জন পক্ষে যাহা সদা বোধগম্য
।।
মূল কথা ভাব-ছাড়া কিছু নাহি হয়

যে ভাবে যে ভাব ধরে সেই ভাবে পায়
।।
রাজা যদি হতে চাও ধর রাজ-ভাব

ভাব অনুযায়ী আসে ভাবের স্বভাব
।।
ধর্ম্ম ক্ষেত্রে কর্ম্ম ক্ষেত্রে ভাব হয় মূল

ভাব ছাড়া ধর্ম্ম কর্ম্ম সকলি নির্ম্মূল
।।
কর্ম্মহীন সাত্বিকতা আনে অনাচার

রাজসিক ধর্ম্মে আছে শক্তির আধার
।।
গৃহী পক্ষে রাজধর্ম্ম শাস্ত্রের বিধান

মূলভিত্তি হতে তার সাত্বিক-প্রধান
।।
সত্তঃ রজঃ মিলনেতে গার্হস্থ্য-জীবন

মোর পিতা হরিচাঁদ করিল গঠন
।।
এই দুই তত্ব মিলে যাঁহার জীবনে

সেই মোর শ্রেষ্ঠ ভক্ত হরিচাঁদ ভণে
।।
কর্ম্মেতে প্রধান হবে ধর্ম্মেতে প্রবল

বাহুতে রাখিবে শক্তি চক্ষে প্রেম-জল
।।
দুষ্ট ধ্বংসে প্রাণপণ, পতিতে করুণা

ভীষ্ম সম চরিত্রেতে প্রেমে ব্রজাঙ্গণা
।।
কোমলে কঠিন হবে অপূর্ব্ব মিলন

কুসুমের মৃদু কন্ঠে বজ্রের গর্জ্জন
।।
-আদর্শ রক্ষা করি পিতার আজ্ঞায়

ইচ্ছা মোর নমঃশূদ্র ঘরে ঘরে পায়
।।
আর বলি খাঁটি মতো হবে কোন জন?
যার কার্য্যে হবে দুই ভাবে মিলন
।।
কত জন রবে শুধু সত্তঃ ভাব নিয়ে

কত যাবে রজঃ পথে ধনে মত্ত হয়ে
।।
উভয়ের পরিণামে হা-হুতাশ সার

এরা নহে খাঁটি ভক্ত আমার পিতার
।।
আমি গেলে এই ঘরে যে হবে ঠাকুর

তাঁর লীলা হবে আরো কঠিন-মধুর
।।
রাজর্ষি উপাধি তাঁর ঘোষিবে জগত

তাঁর কার্য্য হবে ক্রমে মহৎ মহৎ
।।
অন্তরের ভাব জানি কর্ম্ম যেবা করে

অন্তরঙ্গবলি ব্যাখ্যা সবে করে তাঁরে
।।
অন্তরের ভাব আজি বলিনু খুলিয়া

কোন পথে যাবে দেখ আপনি বুঝিয়া
।।
প্রভুর বচনে ভক্ত শা্ন্তি পায় মনে

কেন্দে কয় দয়াময়! রাখিও চরণে
।।
সংসার জীবনে প্রভু রাজ-ধর্ম্ম রাখে

রাজ-বুদ্ধি রাজাচার রাজ-ভাব থাকে
।।
জল মধ্যে রাজহংস করে জল কেলি

জল নিয়ে ছড়াছড়ি জল ফেলা ফেলি
।।
নিজে ডুবে নানাভাবে জলের ভিতর

কিন্তু জণে নাহি ছোঁয় তার কলেবর
।।
সেই মত প্রভু মেশে সকলের সঙ্গে

আপনার ভাবে নাচে আপন তরঙ্গে
।।
পরশি সকলে প্রভু সবে ধন্য কর

স্পর্শিতে প্রভুর অঙ্গ নাহি দেয় কারে
।।
পদধূলি নিতে যদি কেহ আগু হয়

দূর-দূর করি প্রভু তাহারে তাড়ায়
।।
অনন্ত আকাশে সূর্য্য আপনার তেজে

রক্ষা করে জীবগণে আপন গরজে
।।

 

রশ্মি-রূপে স্পর্শ করে যত জীব কুলে
সূর্য্যকে স্পর্শিতে জীব পারে কোন কালে?
সূর্য্য সম গুরুচাঁদ সবে দয়া করে

কিন্তু নাহি দেয় প্রভু স্পর্শিতে তাঁহারে
।।
রাজ-ব্যবহারে চলে রাজ-ভাব নিয়া

সেই ভাব নিতে জাতি পড়ে পিছাইয়া
।।
নাগাল না পেয়ে তাঁরে মনে হয় রোষ

পরশ্রীকাতর হয়ে কহে নানা দোষ
।।
অন্তরঙ্গ ভক্ত তাহে কোণ নাহি দেয়

বহিরঙ্গ ভক্ত মনে জাগিল সংশয়
।।
অভ্যাসের বশে বটে আসে ওড়াকান্দী

মন থাকে নিজ দেশে দেহ আনে বান্ধি
।।
এই ভাবে করে তারা লুকোচুরী খেলা

তের শত চৌদ্দ সালে পরীক্ষা পহেলা
।।
বহিরঙ্গ ভক্ত যত ছিল পরিচয়

বিধবা-বিবাহ চাপে দূরে চলি যায়
।।
সে সব বৃত্তান্ত পরে হইবে লিখন

এবে শুন যত আছে অন্য বিবরণ
।।
তের শত নয় সালে শ্রীশশীভূষণ

পুত্র রূপে পেল কোলে প্রমথরঞ্জন
।।
পুত্র পেয়ে মহাশয় আনন্দিত মন

এক দিন পিতৃ-পদে করে নিবেদন
।।
নিবেদন করিবারে মনে শঙ্কা পাই

দয়া করে আজ্ঞা দিলে প্রার্থণা জানাই
।।
প্রভু বলে বল কথা শশী বাপধন

অকপটে বল মোরে তোমার মনন
।।
বাবু বলে কৃপা বলে পেয়েছি নন্দন

ইচ্ছা করে দশভূজা করিব পূজন
।।
প্রভু বলে ওরে বাবা! রাজসূয় যজ্ঞ

ও সব করিতে বাপু! আমি নহি যোগ্য
।।
দশ-হাতাবেটি আসি দশ হাতে খায়

ওর পূজা দিতে গেলে রাজা হতে হয়
।।
আমরা সামান্য লোক নহি অর্থ কড়ি

বিশেষতঃ অল্প স্থান বিল মধ্যে বাড়ী
।।
দশভূজা পূজা যেথা হয় আয়োজন

লোক সংঘটন সেথা হয় আগণন
।।
এ সব আমার পক্ষে সম্ভব না হবে

দোষ পেলে লোকে সবে কলঙ্ক গাহিবে
।।
এমত বলিয়া প্রভু মৌন হয়ে রয়

ব্যথা পেয়ে শশীবাবু গৃহ মধ্যে যায়
।।
সারাদিন অনাহারে ফেলে অশ্রুজল

মনে ভাবে হল মোর জীবন বিফল
।।
চক্রীর চক্রান্ত-চক্র নরে বোঝা ভার

পরদিন প্রাতেঃ বলে দয়াল আমার
।।
শোন শশী! অদ্য নিশি দেখিছি স্বপন

দশভূজা পূজা লাগি কর আয়োজন
।।
আমারে স্বপনে দেবী বলিলা বচন

মনোসাধে পূজা নিবে আমার ভবন
।।
যশোহরবাসী এক ব্রাহ্মণ সুজন

চন্ডী-স্তব-মন্ত্র নাকি করেছে লিখন
।।
সেই স্তব মন্ত্রে পূজা এই বাড়ী হবে

ব্রাহ্মণ আসিয়া নিজে পুঁথি দিয়া যাবে
।।
পিতৃ-মুখে এই বাক্য যখন শুনিল

মহানন্দে শশীবাবু আহারাদি কৈল
।।
ক্রমে বারিধারা শান্ত আসিল শরৎ

সোনালী কিরণে শুদ্ধ সুন্দর জগৎ
।।
দোয়েল পাপিয়া দলে করে কলতান

শারদ বাতাসে বাজে আগমনী গান
।।
ওড়াকান্দী দশভূজা পূজা আয়োজন

শুনি নর-নারী সবে আনন্দিত মন
।।
ভাস্কর আসিয়া সুখে মাতৃ মূর্ত্তি খানি

গড়িল চিত্রের মত তুলি রেখা টানি
।।
মৃন্ময়ী মূরতি যেন লাগিল হাসিতে

নামিল জননী যেন আঁধার নাশিতে
।।

 

ষষ্টি-কল্প দিবসেতে বোধনের কালে
উপনীত দ্বিজ এক দুর্গা’ ‘দূর্গাবলে
।।
প্রভুর নিকটে গিয়া দিল দরশন

কর জোড় করি কহে বিনয় বচন
।।
যশোহর বাস মোর গুন মহাশয়

আসিয়াছি তব গৃহে মাতার আজ্ঞায়
।।
চন্ডী স্তুতি গান আমি করেছি রচনা

প্রতিদিন করি আমি দেবীর বন্দনা
।।
তিন দিন পূর্ব্বে দেবী স্বপনেতে কয়

স্বপ্ন-ঘোরে শুনি যেন দৈববাণী প্রায়

শুন দ্বিজ চন্ডী-গীতি করেছ রচন

তব প্রতি প্রীতি আমি তাহার কারণ
।।
ওড়াকান্দী হরিচাঁদ অবতীর্ণ হল

লীলা সাঙ্গ করি প্রভু নিজ লোকে গেল
।।
তস্য পুত্র রূপে যিনি তিনি মোর গুরু

মহাকাল মহেশ্বর বাঞ্ছা-কল্প-তরু
।।
তাঁর পুত্র রূপে যিনি শ্রীশশীভূষণ

দশভূজা রূপে মোরে করিবে পূজন
।।
সেই পূজা মনোসাধে করিব গ্রহণ

চন্ডী-স্তুতি লয়ে তুমি করহ গমন
।।
তোমার রচিত গীতি সেথা পাঠ হবে

গুরুচাঁদ কাছে তুমি এই স্তব দিবে
।।
আর বলি গুরুচাঁদে বলিও বচন

পূজা ঘরে নমস্কার না করে কখন
।।
গুরুর প্রণাম আমি নিতে নাহি পারি

বিনয়ে বলিও কথা কর জোড় করি
।।
এই মত কথা বলে ব্রাহ্মণ তনয়

নয়নের জলে তার বক্ষ ভেসে যায়
।।
বার বার নমস্কার প্রভু পদে করে

প্রভু বলে স্থির হতে সেই দ্বিজবরে
।।
ব্রাহ্মণের ভাব দেখি ভক্ত চোখে জল

ভাবাবেগে বলে কেহ হরি হরি বল
।।
আশ্চর্য্য কাহিনী শুনি হল ভাবোদয়

বসে বলে জয় হরি-গুরু চাঁদের হায়
।।
এই ভাবে দেবী পূজা অরম্ভ করিল

প্রেমানন্দে পূজা সাঙ্গ দশমীতে হ

বিজয়া-দশমী করে বিসর্জ্জন পরে

লোকে লোকে লোকারণ্য হল চারিধারে
।।
প্রভু বলে শান্তি সভা করহে এখন

নারীগণে করে ধ্বনি মঙ্গলাচরণ
।।
প্রভুকে বসাল সবে পবিত্র আসনে

ধূপ, দীপ, চন্দনাদি নারীগণ আনে
।।
অগ্রে বিপ্র প্রভু পদে বরণ করিল

নারীগণে এক সঙ্গে হুলুধ্বনি দিল
।।
নর গণে জয় ধ্বনি হরি ধ্বনি করে

প্রভুকে বরণ করে আনন্দ অন্তরে
।।
বরণের কালে বহে দুই চক্ষে জল

মনে ভাবে ধন্য মোর জনম সফল
।।
ভক্ত গণে পরস্পরে হিংসা দ্বেষ ভুলি

ভাই ভাই বলে সবে করে কোলাকুলি
।।
এই ভাবে দশভূজা পূজা সমাপন

সারা রাত্রি হরি কথা হল আলাপন
।।
ওড়াকান্দী পূজা নিতে দশভূজা এল

হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল
।।

 

চন্ডাল গালি মোক্ষণ ও নমঃশূদ্র জাতি উদ্ধার

 

বল্লালের কোপে পড়ে, বাজ্য রাজধানী ছেড়ে,
বৌদ্ধ-ধর্ম্মী বঙ্গীয় ব্রাহ্মণ
।।
অদৃষ্টের পরিহাসে বনে কি কান্তারে এসে
করিলেন আশ্রয় গ্রহণ
।।
হিন্দু-ধর্ম্মী ব্রাহ্মণেরা বৌদ্ধ ধর্ম্ম করি সারা
হিন্দু ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠা করিল

 

 

যারা নাহি বাধ্য হয় ব্রাহ্মণের মন্ত্রণায়
হীন-আখ্যা কত জন পেল
।।
তারা বলে ব্যবস্থায় ইহা যুক্তি-মুক্ত নয়

শাস্ত্র-মতে এই আখ্যা ভুল

রাজধানী ছেড়ে দূরে, যাহারা বসতি করে
চন্ডাল বলিয়া জান স্থুল
।।
ব্রাহ্মণের ব্যবস্থায় কেবা ভুল ধরে হায়!
তাই সবে রহে চুপ করি

চন্ডালবলিয়া তাই যত নমঃশূদ্র ভাই
আখ্যা পেয়ে মরিছে গুমরি
।।
তারা বলে একি দায়কি ভাবে চন্ডালকয়
এত শুধু হিংসা-করে-বলা

বিধানে মেশেনা যাহা সেই আখ্যা দিল তাহা!
তাই সবে রহে চুপ করি

চন্ডালবলিয়া তাই যত নমঃশূদ্র ভাই
আখ্যা পেয়ে মরিছে গুমরি
।।
তারা বলে একি দায়কি ভাবে চন্ডালকয়
এত শুধু হিংসা-করে-বলা

বিধানে মেশেনা যাহা সেই আখ্যা দিল আহা!
সব কিছু ব্রাহ্মণেরি ছলা
।।
বলতে বলুক হীন এ ভাবে যাবে না দিন
কাল-চক্র অবশ্য ঘুরিবে

সেই দিনে ব্রাহ্মণেরা মেলিয়া নয়ন তারা,
হীন ঠাঁই ক্ষমা চেয়ে লবে
।।
চন্ডালের পরিচয় দিব আমি এ সময়
ব্রাহ্মণের শাস্ত্রে যাহা লেখে

প্রমাণ হইবে তাতে শুধু হিংসাহিংসি মতে
নমঃশূদ্রে নির্য্যাতনে রাখে
।।
গ্রামের বাহিসে বাস নাহি করে চাষ বাস
মৃত দেহ শ্মশানে পোড়ায়

মৃত হতে বস্ত্র লয় তাই দিয়ে ঢাকে কায়
বর্ত্তমানে ডোমবলি কায়
।।
চন্ডাল-শ্বপচানান্তু বহির্গ্রামাৎ প্রতিশয়ঃ
অপপাত্রাশ্চ কর্ত্তব্যাঃ ধনমেষাং শ্বগর্দ্দভম
।।
বাসাংসি মৃত চেলানি ভিন্ন ভান্ডেষু ভোজনম
।।
কার্যায়সমলঙ্কারঃ পরিব্রাজ্যা চ নিত্যশঃ
।।
অন্নেমেষাং পরাধীনং দেয়ং স্যাদ্ভিন্নভাজনে

রাত্রৌন বিচরেয়ুস্তে গ্রামেষু নগরেষু চ
।।
দিবা চরেষুঃ কার্য্যার্থং চিহ্নিতা রাজ শাসনৈঃ

অবান্ধবং শবঞ্চৈব নির্হরেয়ুরিতি রাজ শাসনৈঃ

অবান্ধবং শবঞ্চৈব নির্হরেয়ুরিতি স্থিতিঃ
।।
বধ্যাংশ্চ হন্যুঃ সততং যথাশাস্ত্রং নুপাজ্ঞয়া

বধ্যাবাসাংসি গৃহ্নীয়ুঃ শয্যাশ্চ্য ভরণানি চা
মনু
কুমারী-সম্ভবস্তেকঃ সাগ্রোত্রায়াং দ্বিতীয়কঃ

ব্রাহ্মণ্যাং শূদ্র জনিতশ্চন্ডাল স্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ
।।
-----ব্যসবাংহিতা
আরেক প্রমাণ বলি বল কোন পথে চলি

নানা মুতি বলে নানা মতে

আকাশেতে যেই রাহু মাথা আছে নেই বাহু
পূর্ণ চন্দ্র খায় নাকি তাতে
।।
চন্ডাল বলিয়া তারে শাস্ত্র মধ্যে ব্যাখ্যা করে
অন্য এক আছেও চন্ডাল

ক্রোধ না চন্ডালবলে গালি দেয় পলে পলে
ক্রোধে নাহি মানে কালাকাল
।।
এ তিন চন্ডাল সাথে যোগ নাই কোন মতে
বঙ্গবাসী নমঃশূদ্র গণে

নমঃশূদ্র জাতি-শ্রেষ্ঠ শৌর্য্যে বীর্য্যে সুগরিষ্ঠ
তাই হিংসা করে হীন জনে
।।
আর কতা বলি ধীরে রাহু বলে ত্রিসংসারে
জীব কিংবা শিব কিছু নয়

যবে পৃথিবীর ছায়া ঢাকে পূর্ণচন্দ্র-কায়া
রাহু বলি সবে তারে কয়
।।
বিজ্ঞানে প্রমাণ পাই রাহু বলে কিছু নাই
শেষ কথা বলি দৃঢ় স্বরে

জীব মাত্রে আছে ক্রোধ, ক্রোধে আছে শোধ-বোধ
চন্ডাল কি আছে বিশ্ব ভরে?

গ্রামের বাহিরে বাস নাহি করে চাসবাস
এই যদি চন্ডাল লক্ষণ

কৃষি কর্ম্মে সদা রত নমঃশূদ্র আছে যত
গ্রাম ছাড়া থাকে না কখন
।।
তবুও চন্ডাল তারে বলে শুধু হিংসা করে
হিংসা ফলে ফলে বিষফল

হিংসা-পাপ দিনে দিনে বঙ্গবাসী হিন্দুগণে
ক্রমে ক্রমে দিল রবাতল
।।
বিধর্ম্মীর পদতলে পিষ্ঠ হচ্ছে তিলে তিলে
ইষ্ট কিছু দেখা নাহি যায়

যদি নাহি ভাঙ্গে ভুল আর কিরে পাবে কূল
হিন্দু ধ্বংস হইবে নিশ্চয়

সে সব কাহিনী ছেড়ে বলি গ্রন্থ সূত্র ধরে
কোন ভাবে এ কলঙ্ক গেল?
কে মুছিল এ কলঙ্ক সে ইতিহাসের অঙ্ক
কার গুণে প্রকাশিত হল

লাট-দরবার কালে ম্যাজিস্ট্রেট মীডে বলে
নমঃশূদ্র জাতি নাহি চিনি

গুরুচাঁদ ব্যথা পায় তাই ফিরে নিজালয়
মনঃশূদ্র জাতি নাহি চিনি

গুরুচাঁদ ব্যথা পায় তাই ফিরে নিজালয়
যুক্তি করে নিজে গুণমণি
।।
মীডে ডাকি বলে ধীরে বল মীড কি প্রকারে
এ কলঙ্ক ঘুচাইব আমি?
মোর মনে এই হয় ঘুচাইতে এই দায়
ইচ্ছা বুঝি কবে অন্তর্যামী
।।
মীড কহে বড় কর্তা তব মুখে শুন বার্তা
মনে দুঃখ পাই অতিশয়

চন্ডাল কাহাকে বলে কি দোষ চন্ডাল হলে
সব কথা বলহে আমায়
।।
প্রভু কয় শোন মীড তুমি রাজ পুরোহিত
কিন্তু যদি কোন দুষ্ট খল

মুচি বলে আখ্যা দেয় ছলে বলে অর্থ নেয়

তুমি তারে কিবা দেও ফল?
আমাদের দশা তাই বিনা দোষে গালি খাই
বল-হীন বসে থাকি চুপ

রাজ্য যদি দয়া করে দূর করে দিতে পারে
ব্যথা ভার কলঙ্কের রূপ
।।
এত বলি ব্যাখা করি তখনে বুঝাল তাঁরে
চন্ডালের খাটি ব্যাখ্যা যাহা

এ অধ্যায় আদি ভাবে যাহা লেখা হল আগে
গুরুচাঁদ বলিলেন তাহা
।।
কথা শুনি মীড কয় তাই যদি মহাশয়
গণনার পত্র আন কিনি

দেখি তাতে কিবা লেখে কলমের ঘূর্নীপাকে
কত কথা আনিয়াছে টানি
।।
প্রভু বলে মূল্য কত? দিব টাকা চাহ যত
অবিলম্বে আন সেই বই

সংশোধনে লাগে যাহা আমি দিয়া দিব তাহা
বই এনে তুমি কর সই
।।
মীড বলে মহাশয় কার্য এত সোজা নয়
অগ্রভাবে টাকা দিতে হবে

মূল্য পেলে দিবে বই এই ঠিক কথা কই
তার মধ্যে সব লেখা পাবে
।।
গেট নামে অফিসার সেন্সার কমিশনার
তাঁই ঠাঁই দরখস্ত যাবে

যু্ক্তি মত কথা হলে সাহেব কাটিবে ভেুলে
তোমাদের কলঙ্ক না রবে
।।
পয়ঁত্রিশ টাকা চাই তাহা হলে গ্রন্থ পাই
শীঘ্র করি টাকা দাও মোরে

মোর মনে এই হয় যীশুজীর করুণায়
সিদ্ধকাম হব অতঃপরে
।।
প্রভুজীর মনে হয় একা যদি এ সময়
এই টাকা আমি করি দান

কেহ টেন নাহি পাবে কোন দিন কোন ভাবে
চন্ডালত্ব হল অবসান
।।


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free