গান নং ১০১~১১০
গান নং ১০১
ও দয়াল রে,
ভিন্ন বৃক্ষে ফোটে ফুল
এক দেবতার চরণ পায়
ভিন্ন ধারার ভিন্ন মানুষ
এক ঈশ্বরে মিশে যায়।
ওরে, নদীর জলের দোষ হয় না
চাঁদ সূর্যের বিভেদ হয় না
খোলা আকাশের জাত হয় না
আবার বাতাস সবার শ্বাস দিয়ে যায়।
ওরে, প্রাণের গানের সুর হয় না
বাউল মনের ‘ছেদ যায় না
প্রেমের কোন রং হয় না।
আবার ভক্তিগুণে প্রাণের মানুষ
রুপ ধরে সে কাছে আসে
আমার মত সে আমারে
সে আমারে ভালবাসে।
ওরে, সে আর আমি এক হয়ে যাই
বাউল মনে প্রাণের গান গায়।
গান নং ১০২
ছয়জন মন্ত্রী একজন রাজা
মন্ত্রীদের দাপট ভারি
ওরে, রাজার বড় বেহাল দশা
মন্ত্রী করে হুকুম জারি।
ছয় মন্ত্রীর একজন কানা
ভাল কিছু দেখে না
নিত্য দেয় কু-বুদ্ধি সে
সু-পথ সে তো চেনে না
আর সব মন্ত্রী যারা
তাদের নিজের বুদ্ধি নাই
সবাই চলে তার কথাতে
একলা রাজা কাঁদে তাই।
গান নং ১০৩
ও পাগল মন কেন উচাটন
ভ্রম কেন ভ্রম পথে অকারণ।
তুমি বোঝ না নিজের কথা
কিসে হবে নিজের ভালো
বোঝ না কিসে ঘুচিবে মনব্যাথা।
কোন বিরহে কাঁদ এখন
সুখের আবেশ ভাবি কাঁটার সাথে
কর আলিঙ্গন।
চাঁদের আলো ঘুচায় না মনের আঁধার
মেঘের আনাগোনা আকাশ জুড়ে
সূর্য চাঁদের আলো করে না আলোকিত
একই সঙ্গে সারা পৃথিবী ভরে।
জনম ভরে কি সন্ধান করিলে
কি পেলে তার আছে কি
কোন অনুসন্ধান।
গান নং ১০৪
কৃষ্ণ নামের বাঁশি আমার পরাণে আজো বাজলো না
নয়নে জলের ধারা ওই চরণের আশে ঝরল না।
বেজেছিল রাধা নামে তোমার বাঁশরি খান
চরণে পেল আশ্রয় ছেড়ে দিয়ে কুলমান
আমার রাধার ধারা ঘটলো না।
তুমি জানো না তোমায় আমি কত ভালবাসি
ঘুরি তোমার কারণে আমি হয়ে পরবাসী
ফুলের সুবাসে তুমি তোমার চরণে ফুল
সবারি আপন তুমি কুল হারানোর কুল
তোমার চরণ তরী আমার ভাঙ্গা কুলে
ওপারে আমায় নিতে আসলো না।
গান নং ১০৫
আমার মনটা টানে পথের পানে
কোথায় আমার পথ?
যদি গো পথ হারাব পথের মাঝে
যাই না কেন মন ভোলানো পথ।
পায়ের নীচে মাটির ছোঁয়া
মাথায় খোলা আকাশ
নবীন ধানে প্রাণের দোলা
দোলায় নিতো বাতাস
আপন তারা আমায় যারা
আপন করে আমার সাথে
হয় গো সহমত।
স্বজন মিলে কতই খেলা
মিলিয়েছি কত মেলা
নদীর বুকে সাঁতার দিয়ে
ভাসিয়েছি কত ভেলা
হারানো দিন হারানো সুর
উদাস করে সবার হৃদে
এ আমার প্রাণের অভিমত।
গান নং ১০৬
যে কথা প্রাণের কথা নয়
যে কথা মনের কথা নয়
তারে কি সুরে বাঁধা যায়?
মনের কথা প্রাণের কথা হলে
তারে সুরে সাধা যায়।
ঘরের বাহির না হলে কি আকাশ দেখা যায়
চাঁদের সাথী না হলে কেউ কি জ্যোস্না দেখতে পায়
গন্ধবিহীন ফুল কি জানে ভ্রমর কেন আসে না
ঝরে যাওয়া ফুল কি জানে দেবতার চরণ কেন পায় না।
চাওয়া পাওয়ার দোলনা তাতে কি এমনি দোলা যায়?
গান নং ১০৭
ভুবন ভরিয়া দেখি তোমার স্বরূপ
নয়নে তোমায় হেরি
তোমায় চিনতে নারি
মনে অনুমানি রূপ
তোমার স্বরূপ।
আপন রূপে ভোলাও মোরে
ভুলিয়ে রাখ মোদের সবারে
অরূপ রূপ প্রকাশ কর
সকল প্রকার রূপ ধর
অন্তর বাহিরে তুমি রও
রূপের মাঝারে কথা কও
সকলি তোমার রূপ
তোমার স্বরূপ।
গান নং ১০৮
সখীরে, বেলা হল চল যাই নদীর কিনারে
অবহেলায় দেরী হইলে
কাঁদতে হবে ঘোর আঁধারে
চল যাই নদীর কিনারে।
সখীরে, কিসের দোঁহাই দিবি যদি গো সময় যায়
আলসে দিবস গেলে খেয়া যদি পারে যায়
আর কি হবে উপায়।
গোধূলির ছায়া এল, সখী, ত্বরা করি চল
কাণ্ডারির দয়া হলে মিলবে তরী অচল
সখী, ত্বরা করি চল।
সখী, যে টুকু সময় আছে মোরা যেতে পারি পারে।
গান নং ১০৯
আমার হরিচাঁদ গুণমণি।
বিনামূল্যে প্রেম বিকায়ে সে করে মহাজনী
যারা প্রেমের খরিদ্দার তারা সবাই প্রেম বাজারে চল
টাকা পয়সা লাগে না সেথা প্রেমের ঘোরে সবাই হরিবোলা
একবার যে সে নাম বলে তারে দেয় সে প্রেমের মহাজনী।।
অসীম প্রেম ফুরায় নারে প্রেমভাণ্ড শুধু বাড়িয়া চলে
অমিত জনে প্রেম বিলাল করল সোনা সবে ভক্তি বলে
সে হরিনাম আসে না মুখে তবু ত্বরাও তুমি পরশমণি।।
মহানন্দ তারক চাঁদ অশ্বিনী ও হরিভক্তগণ
তারা প্রেমের দোকানদার করে প্রেমের স্বরূপ সন্ধান
বৃন্দাবন বলে এই কপালে মিলল না তো হরির চরণখানি।।
গান নং ১১০
নদীতে ঢেউ দিল কে, ঢেউ দিল কে?
শান্ত জলে নৌকা বেয়ে, যেতেছিল ওপার নেয়ে,
কোথা হতে ঢেউ আসিয়ে, ঘুরিয়ে দিল নাওকে।
নদীতে ঢেউ দিল কে?
সবে দেখে শান্ত নেয়ে, এক নিরিখে যাচ্ছে বেয়ে,
অরি সব আসল ধেয়ে, ঘোরে চারিদিকে।
নদীতে ঢেউ দিল কে?
একেত ঢেউয়ের তাড়া, চতুর্দিকে শত্রু খাড়া,
ভয় পেয়ে দিশেহারা, পড়ে ঘোর বিপাকে।
নদীতে ঢেউ দিল কে?
কূলের দিকে চেয়ে দেখে, দেখা না যায় সমুখে,
বেলা ডোবে আঁধার ঢাকে, যাবে কোন দিকে।
নদীতে ঢেউ দিল কে?
তুই হলি অসহায়, মন মাঝিরে ডাকরে ত্বরায়,
তিনি হলে দীনের সহায়, তরী ডুবায় কে।
নদীতে ঢেউ দিল কে?
বৃন্দে ডাকে পরাণ খুলে, আত্মস্বার্থ সকল ভুলে,
তুমি বান্ধব এস হালে, তোমা বিনা কাণ্ডারি কে?
নদীতে ঢেউ দিল কে?